বিএনএ,ঢাকা:মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সবার মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
রোববার(২১ ফেব্রুয়ারি)মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১-এর উদ্বোধন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান আরও বলেন,মাতৃভাষা একটি জাতিকে পরিচয় এবং সম্মান এনে দেয়।যোগাযোগের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন থাকলেও মাতৃভাষাকাকে গুরুত্ব দিতে হবে।ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই বাংলাদেশ পেয়েছে তার স্বাধীনতা।সেই মহান সংগ্রামের ইতিহাস ধারণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।
একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে আওয়ামী লীগ সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তা অনেক জ্ঞানী-গুণীজন মানতে চান না।পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ বিষয় প্রমাণিত হয়েছে।ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে সরাসরি জড়িত ছিলেন সেই সত্য চেপে রাখা যায়নি।১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করা হয়েছে।ভাষা আন্দোলন করতে গিয়েই তিনি জেলে ছিলেন।মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা কাজ করছেন। মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যেয়েই জাতির পিতা মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আলোচনার শুরুতেই বিশ্বের সকল ভাষাভাষি মানুষকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা তিনি বলেন, শুধু বাংলা নয় বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ভাষা সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়েই সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করছে সরকার।এছাড়া, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সরকার প্রধান।
মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও মাতৃভাষা পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিটিউট।গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। শুরুতেই, দেশে বিদেশে মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ৪ জনের হাতে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২১ তুলে দেয়া হয়।
জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবারের এই সম্মাননা দেয়া হয়েছে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে।আর জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে অবদানের স্বীকৃতিসরূপ এই সম্মাননা পেয়েছেন খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস বাংলাদেশ সরকারের এই সম্মাননা পেয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
করোনার কারণে নিজের শিক্ষক রফিকুল ইসলামের হাতে সরাসরি পদক তুলে দিতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হলে সব স্বাধীনতা থাকে না।অনেকটা বন্দী জীবনযাপন করতে হয়।কারণ এক জায়গায় যেতে গেলে নিরাপত্তার লোকসহ প্রায় হাজার খানেক লোককে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে নানাভাবে তাদেরকে কাজে লাগায়। তাদের কথা চিন্তা করেই কিন্তু যাওয়া সম্ভব হয়নি।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিস বিয়েট্রিস কালদুন।শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলী।
বিএনএনিউজ/আরকেসি