25 C
আবহাওয়া
১:০১ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মিয়ানমারের শতশত সেনা পালাচ্ছে ভারতে!

মিয়ানমারের শতশত সেনা পালাচ্ছে ভারতে!


বিএনএ, ডেস্ক : মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই তীব্রতা বেড়েছে। দু’বছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া সামরিক জান্তা বর্তমানে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র আন্দোলন দমন করতে হিমশিম খাচ্ছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির তীব্র আক্রমণে টিকতে না পেরে জান্তা সরকারের শত শত সেনা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে। গত দুই দিনে আরও ২৭৮ জান্তা সেনা ভারতের মিজোরামে পালিয়ে গেছে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সেনারা তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে মিজোরাম-মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বান্দুকবাঙ্গা গ্রামে পালিয়ে যায়। গত ১৩ নভেম্বর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩৬ জনে।

একইসঙ্গে, শতাধিক জান্তা সেনা আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতি। এরইমধ্যে দেশটির ৩৩টি শহর জান্তার কাছ থেকে নিজেদের দখলে নেয়ারও দাবি করেছে বিদ্রোহীরা।
শত শত সেনার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় মিয়ানমার সরকারের নাজুক অবস্থার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।

মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, আ’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি-এই তিন সশস্ত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গত অক্টোবরের শেষের দিকে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামের একটি অভিযান চালায়। এই অভিযানের পর মিয়ানমারের সীমান্তগুলো একের পর এক জান্তার হাতছাড়া হতে থাকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইনে একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা তাদের ঘাঁটিগুলো দখল করে নেওয়ার পর তারা ভারতে আশ্রয় নেয়। তাদেরকে দ্রুততম সময়ে প্রত্যাবাসন করা হবে।

গত ১৭ জুলাই আরাকান আর্মি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কয়েকদিন পর এই সেনা সদস্যরা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এই পলাতক সেনাদের আসাম রাইফেলস ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে বলে। এর আগে যেসব সেনা মায়ানমারের সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করেছে তাদের ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। এবারও আশ্রয় নেয়া সেনা সদস্যদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এর আগে, ভারতীয় বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে আসা সেনাদের মণিপুরে মিয়ানমার সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে।

এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের হামলার মুখে মিয়ানমারের সেনা ভারতে পালিয়ে আসার পর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ১৯ জানুয়ারি আসাম পুলিশ কম্যান্ডোদের পাসিং আউট প্যারেডে তিনি এই ঘোষণা করেন ।
মিয়ানমার আর ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ বিনা ভিসায় একে অন্যের দেশে যাতায়াত করতে পারেন যে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বা এফএমআর অনুযায়ী, সেটাও আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ।

তিনি এরকম সময়ে মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, যখন মাঝে মাঝেই মিয়ানমার থেকে সেদেশের সেনা সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্র সহ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছে মিজোরামের অতি ক্ষমতাশালী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াং মিজো এসোসিয়েশন এবং ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল।

মিজো এবং নাগা জাতিগোষ্ঠীগুলি বলছে ভারত, বাংলাদেশ আর মিয়ানমার – তিন দেশেই তাদের আত্মীয় স্বজনরা বসবাস করেন একই জনজাতি-গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার কারণে। নিয়মিতই তারা যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিলে অথবা এফএমআর স্থগিত রাখলে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ হয়ে যাবে।

ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম অনুযায়ী সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ সীমান্তের দুদিকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিনা ভিসায় চলাচল করতে পারেন। তবে তার জন্য দুই দেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে আর অন্য দেশে গিয়ে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকা যায়।

মনিপুর আর মিয়ানমার সীমান্তে অবশ্য বেড়া দেওয়ার কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে ১০ কিলোমিটারে ওই কাজ চলছে, এরপরে আরও ৭০ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।

প্রবল ক্ষমতাশালী ইয়াং মিজো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লালমাছুয়ানা জানিয়েছে ” জো জনগোষ্ঠীর মানুষ মিয়ানমার, ভারত আর বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। এরা সবাই একে অপরের আত্মীয়। যখন ভারত বা মিয়ানমার বা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তখন তো আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় নি যে আমরা কোথায় থাকতে চাই?
রাজনৈতিক সীমান্ত দিয়ে তো পরিবারের বন্ধন বন্ধ করা যায় না। এখন যদি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়, এফএমআর বন্ধ করে দেওয়া হয়, ব্যাপারটা অনেকটা বার্লিন ওয়ালের মতো হয়ে যাবে অভিযোগ করেন লালমাছুয়ানা।
ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আর এমএমআর বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটা স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

বিএনএনিউজ / ওজি/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ