কোথায় গেল একুশ দফা, আর কোথায় গেল জনতার রায়।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৪৯
অনেক কর্মীই আস্তে আস্তে মুক্তি পেতে লাগল। কেএসপি দলের নেতারা রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য একটা কথাও বলেন নাই। কারণ, তাদের দলের কেউই জেলে নাই। আওয়ামী লীগ এমএলএ ও কর্মীরা তখনও অনেকে জেলে এবং অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলছে। আতাউর রহমান সাহেব, আবুল মনসুর আহমদ, মানিক ভাই ও আমি অনেকক্ষণ আলাপ-আলোচনা করলাম। হক সাহেবের নেতৃত্বে অনাস্থা দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে।
হক সাহেবের চেয়েও তাঁর কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গই বেশি তৎপর মুসলিম লীগের সাথে কোনো নীতি, আদর্শ ছাড়াই মিটমাট করার। কোথায় গেল একুশ দফা, আর কোথায় গেল জনতার রায়। তিনজনই প্রথমে একটু একটু অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অনাস্থা সম্বন্ধে কোনো আপত্তি নাই, তবে পারা যাবে কি যাবে না এ প্রশ্ন তুলেছিলেন। আমি বললাম, না পারার কোনো কারণ নাই। নীতি বলেও তো একটা কথা আছে। শেষ পর্যন্ত সকলেই রাজি হলে আমি ওয়ার্কিং কমিটির সভা আহ্বান করলাম। ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সকল সদস্যই একমত, কেবল সালাম সাহেব ও হাশিমউদ্দিন সাহেব একমত হতে পারলেন না। তবে একথা জানালেন যে, তাঁরা ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই মানতে বাধ্য।
আমি ও আতাউর রহমান সাহেব বের হয়ে পড়লাম এমএলএদের দস্তখত নিতে। সতের দফা চার্জ গঠন করলাম। হক সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে কে অনাস্থা প্রস্তাব প্রথমে পেশ করবে, সে প্রশ্ন হল। অনেকেই আপত্তি করতে লাগলেন, আমার নিজেরও লজ্জা করতে লাগল। তাঁকে তো আমিও সম্মান ও ভক্তি করি। কিন্তু এখন কয়েকজন তথাকথিত নেতা তাঁকে ঘিরে রেখেছে। তাঁকে তাদের কাছ থেকে শত চেষ্টা করেও বের করতে পারলাম না। এদের অনেকেই নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস পূর্বে মুসলিম লীগ ত্যাগ করে এসেই ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজিত হয়। ঠিক হল, আমিই প্রস্তাব আনব আর জনাব আবদুল গণি বার এট ল’ সমর্থন করবেন। আমরা তাঁর কাছে সভা ডেকে অনাস্থা প্রস্তাব মোকাবেলা করার জন্য অনুরোধ করলাম। তিনিও সভা ডাকতে রাজি হলেন। আমরা আওয়ামী লীগের প্রায় একশত তেরজন সদস্যের দস্তখত নিলাম। তাতেই আমাদের হয়ে গেল।৩১
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৮৭-২৮৮।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৪৮