খান মুহাম্মদ আলী, যশোর : নানা বিষয়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া যশোরের চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালামের দখল-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট এলাকাবাসী। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তার নানা অপকর্মের তথ্য সামনে আসছে। মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়সহ বিল-বাঁওড়-বাজারে দখল-চাঁদাবাজি। ক্ষমতাশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেলেই তাদের বাড়িতে গিয়ে সালামের অনুসারী ও ক্যাডার দিয়ে হুমকির দেওয়া হয়। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর অর্থ- ও ক্ষমতার বলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। দলীয় ও কলেজের কমিটি বাণিজ্য, সালিশ-মীমাংসার নামে টাকা আত্মসাৎ এবং আর্থিক সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের পুনর্বাসন করার অভিযোগর নতুন অভিযোগ উঠেছে এই নেতার বিরুদ্ধে।
উপজেলার নিরীহ মানুষের কাছে বিএনপির এই নেতা আতঙ্কের নাম। চাহিদামতো চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। আওয়ামী দোসরদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের দলীয় পদে বসাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে টাকা চুরির ভিডিও, চৌগাছা উপজেলা কমিটির পদ বাণিজ্যের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে যশোর জেলা এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে। লিখিত অভিযোগ আছে বাঁওড় দখলের। উপজেলাজুড়ে সালামের দখল-চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলেও নীরব জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপি। চৌগাছার কয়েকজনের বিএনপির নেতার মদদে বেপরোয়া সালাম। বিএনপির মতো একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাঁদাবাজ ও দখলদার কীভাবে রয়েছেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন চৌগাছার সাধারণ মানুষ।
এম এ সালামের বিরুদ্ধে চৌগাছার সাতটি বিল-বাঁওড় দখলসহ অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি এবং আওয়ামীপন্থি নেতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর (১৭ নভেম্বর) বিকেলে ’চৌগাছায় মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন’ ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এই সংবাদ সম্মেলনের পর আরো অভিযোগ আসতে থাকে।
‘চৌগাছায় মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন’ অংশ নিতে বাধ্য করতে চৌগাছার মৎস্যজীবীদের কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে হুমকি-আতঙ্ক সৃষ্টি ও মোবাইলে হুমকি দেওয়া হয়। তথ্য পাওয়া গেছে, চৌগাছার সিংহঝুলি ইউনিয়নে মারামরির ঘটনায় ভুক্তভোগীদের চিকিৎসার খরচের জন্য দোষীদের একজন মো. উজ্জলের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয় সালামের অনুসারীরা। যা ভুক্তোভোগীদের (আহতদের) না দিয়ে আত্মাসাৎ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি প্রদান, মোবাইল ফোন কলসহ অভিযোগের ভিডিও ও অডিও ক্লিপ এসেছে বিএনএনিউজ ২৪ এর হাতে।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালামের নামে দখল চাঁদাবাজি অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রথমে একটি পত্রিকায় কার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তার থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয়দের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য করেন এমএ সালাম। ওই সংবাদ সম্মেলনে কিছু ব্যবসায়ী ও মৎসজীবী সমিতির সদস্যদের উপস্থিতিতে চাঁদা বাজি, মাছ লুট ও দখলের ঘটনা নিয়ে সাজাই বক্তব্য দেওয়া হয়। যারা এই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনে যেতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি, ত্রাস সৃষ্টিসহ মোবাইলে হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বেড়গবিন্দ্রপুর বাঁওড় মো. কাশেম (ব্যবসায়ী) সরকারীভাবে ইজারাদারের কাছ থেকে রোববার (১৭ নভেম্বর) ১ লাখ চাঁদা দাবি করেছে রাশেদুল। রাশেদুল চৌগাছা বিএনপি সভাপতি সালামের অনুসারী বলে জানা গেছে।
সালামের অনুসারী আমিনুর খাঁ, মামুন, হানেফসহ বাঁওড়ের ইজারাদার সন্তোষ এবং বাঁওড়ের দায়িত্বে থাকা আরও দুজনকে মারপিট করে। মারপিট ও চাঁদাবাজির ঘটনায় সন্তোষ হালদার যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
এ ছাড়া সভাপতি সালাম একটি পরিবারের প্রায় ৭০ বছর ধরে চলে আসা পারিবারিক ব্যবসা ‘জি এস হোমিও হল’ প্রতিষ্ঠান জোর করে দখল করেছে। ভুক্তোভোগী আজাদুর রহমান যার সমাধান পেতে কেন্দ্রীয় বিএনপি বরাবর অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে এম এ সালাম জানান, তার উপজেলায় বাঁওড়ে কোনো ধরনের মাছ লুট হয়নি। কারও কাছ থেকে তিনি বা তাঁর ছোট ভাই টাকা গ্রহণ করেননি।
এদিকে, (১৪ নভেম্বর) বাঁওড় লুট ও চৌগাছার পরিস্থিতি বিষয়ে যশোরের চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা জানান, বল্লভপুর বাঁওড়ে মাছ লুটের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, সেখানে মারামারির ঘটনাও ঘটেছিল। যাদের নামে অভিযোগ এসেছিল, আমরা নাম পুলিশে দিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো আছে। দল-মত নয়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, আমরা চেষ্টা করছি আইনিভাবে ব্যবস্থা নিতে।
চৌগাছা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলা সভাপতি ক্ষমতার পট পরিবর্তনে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করছেন, তবে ভয়ে যারা দিচ্ছে তারা, এমনকি যারা জানে তারাও মুখ খুলছে না।
উল্লেখ্য, যশোরের চৌগাছা উপজেলায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নামে ‘আওয়ামী লীগ নেতার কালো টাকা ও অস্বচ্ছ ভোটার তালিকায়’ বিএনপির কমিটি গঠনের অভিযোগ ছিল। তার কিছু ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা যায় একই পারিবারের একাধিক মানুষকে ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।