বিশ্ব ডেস্ক: নান খিন এইচটু মিন্ট(Nan Khin Htwe Myint)। বার্মার(মিয়ানমার) যে নেত্রীর ট্রেডমার্ক মাথানত না করা, প্রতিবাদী এবং স্পষ্টভাষী।সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯৭৫সালে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৭বছর বয়সেও জেল খাটছেন তিনি। যিনি পিতার আদর্শে লালিত, ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার অধিকার আদায়ের লড়াকু সৈনিক।সম্প্রতি বার্মার জান্তা সরকার তাকে ৭৭বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।
ছবি: অং সান সূচি ও নান খিন (ছবি ইরাবতি)
এ বার তিনি জেল খাটছেন, কারেন প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী ও এনএলডি নেত্রী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারী, মিয়ানমারের হাজার হাজার মানুষ সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে আসার দুই দিন পর, তাকে কারেন রাজ্যের রাজধানীর এইচপিএ-এন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেনাবাহিনীর কমান্ডারকে চ্যালেঞ্জ
সর্বশেষ গ্রেপ্তারের সময় তিনি সেনাবাহিনীর কমান্ডারকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, যদি সেনাবাহিনী মনে করে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে( ২০২০সালের জাতীয় নির্বাচন) তবে আমি ওপেন ব্যালট সিস্টেমে আপনার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে রাজি আছি, দেখুন আপনি জিততে পারেন কি না’। তখন কমান্ডার জানান, নির্বাচনে ইলেকটোরাল ফ্রডের কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে।
১৯৮৮ সালে অংসান সুচির নেতৃত্বে এনএলডি গঠিত হলে নান খিন সেখানে যোগ দেন। দুবছর পর ১৯৯০সালে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে কারেন রাজ্যের রাজধানীর (এইচপিএ) হাপার এমপি নির্বাচিত হন। একই আসনে এনএলডি প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচন ২০১৫ ও ২০২০ সালেও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
পিতার আদর্শে লালিত কন্যা
নান খিন এইচটু মিন্ট এর পিতা ছিলেন কারেন রাজ্যের রাজনৈতিক দল the AFPFL (Anti-Fascist People’s Freedom League) এর প্রধান। ব্রিটিশ শাসন থেকে যখন বার্মা স্বাধীনতা লাভ করছিল, তার আগে পরে রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্ব দেন। জন্ম থেকেই রাষ্ট্র ও রাজনীতি এবং মানুষের অধিকার সম্পর্কে নান খিন ছিলেন সচেতন। তার পিতা মৃত্যুর পূর্বে কারেন জাতিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠির অধিকার প্রতিষ্ঠায় নান খিনকে রাজনৈতিক দীক্ষা দেন।
সে কারণে বার্মার সামরিক শাসকরা বার বার তাদের পরিবার ও স্বজনদের টার্গেট করতো। নান খিনের ছোট ভাইও বার্মার আপার হাউসের সংসদ সদস্য। নান খিন বলেন, আমরা ইউনাইটেড বার্মায় বিশ্বাসী। ফেডারেল ভিত্তিক গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
নান খিন সেনা বাহিনীর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে ছাত্রজীবনে ৬বছর জেল খাটেন। ১৯৯৭ সালে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দু বছর কারাবরণ করেন। এর পরেও একাধিকবার বিনা অভিযোগে তাকে কারাগারে আটকে রাখে সামরিক সরকার।
৭৭ বছর কারাদণ্ড
সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার এবং সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানানোর অভিযোগে গত মে মাসে মূখ্যমন্ত্রী নান খিনকে দুবছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
পরে গত ৯নভেম্বর এনএলডির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্যের বিরুদ্ধে জান্তা সরকার চারটি অভিযোগ গঠন করে এবং নান খিনকে ৭৫বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। বর্তমানে তিনি ৭৭ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
মূখ্যমন্ত্রী নান খিনের ব্যক্তিগত একটি কারও নেই
সামরিক সরকার এনএলডিকে দমাতে সূচিসহ দলীয় নেতাদের নানা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করছে। সাবেক মন্ত্রী,এমপি,মেয়র,মূখ্যমন্ত্রী এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতিকেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রাসি-এনএলডির সিনিয়র একজন নেতা জানান, মূখ্যমন্ত্রী নান খিন খুবই সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। তার মধ্যে কোন বিলাসিতা নেই। তিনি চাইলে রাজকীয় জীবন উপভোগ করতে পারতেন,তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে।
এনএলডির এই নেতা বলেন, আমি ৩০বছর ধরে নান খিনকে চিনি। এই নেত্রীর নিজস্ব কোন কারও নেই। মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে একটি কার নিতে পারতেন,তাও কিনেন নি। তিনি দল ও দেশের জন্য একজন রোল মডেল। দলের চেয়ারপারসন অং সান সূচির পরেই তার অবস্থান।
আরও পড়ুন : মিয়ানমারে সোয়া লাখ শিক্ষক বরখাস্ত
বিএনএনিউজ২৪, ইরাবতি নিউজ অবলম্বনে সৈয়দ গোলাম নবী।