22 C
আবহাওয়া
১২:১২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৫ (ঢাকা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৫ (ঢাকা-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-২ আসনের হালচাল।

ঢাকা- ২ আসন

ঢাকা-২ সংসদীয় আসনটি কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন হযরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তা ও কালিন্দী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নং ওয়ার্ড, ঢাকা মেট্রোপলিটন কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানার সাবেক সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন, সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়ন, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭৫ তম আসন।.

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮ শত ১ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৮ হাজার ৪ শত ৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৪ শত ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৮ শত ২০ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির আবদুল মান্নান খান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮ শত ২৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮ হাজার ১ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৮ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এ বাতেন মিঞা নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৩ শত ৪৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৪ হাজার ৮৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবদুল মান্নান খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ৯ শত ৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মহাম্মদ নুর আলী নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৪ শত ১৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ২২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার ১ শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মতিউর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৪ হাজার ৬ শত ৩০ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৩ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৪ লাখ ৮১ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ইরফান ইবনে আমান অমি, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শাকিল আহম্মেদ শাকিল, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির সুকান্ত শফি চৌধুরী , বট গাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলন এর আতাউল্লাহ, উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গণফোরাম এর মোস্তফা মোহসীন মন্টু, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের জহিরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইরফান ইবনে আমান অমি।ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪৭ হাজার ১ শত ৯৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ,অষ্টম, সংসদে বিএনপি নবম,দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৩৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.২৩%, বিএনপি ৪১.৮৫%, জাতীয় পাটি ১৪.২৯% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.৬৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৬৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৭৫%, বিএনপি ৪৬.৯৭% জাতীয় পাটি ১৮.৯৪%,জামায়াত ইসলামী ১.৪৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৫৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.৭০%, ৪ দলীয় জোট ৫০.৫১%, জাতিয় পার্টি ০.৬৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.০৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৬.৬৫%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.১৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.১৭ %ভোট পায়।

ঢাকা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবে। তার মনোনয় অনেকটা নিশ্চিত। তবে কামরুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমেছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান। তিনি বিএনপির একক প্রার্থী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমানউল্লাহ আমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁর ছেলে ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন মাওলানা জহিরুল ইসলাম।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা- ২ সংসদীয় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ষষ্ট ও সপ্তম ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এ আসনের সংসদ সদস্য হনবিএনপির আবদুল মান্নান খান। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আসনটি আওয়ামী লীগের কামরুল ইসলামের দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০১৪ দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তাঁরই দখলে রয়েছে এই আসন। কিন্ত দলীয় কোন্দলে জর্জরিত দলটি কামরুল ইসলাম ও শাহীন আহমেদ গ্রুপে বিভক্ত। যা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। দুই গ্রুপ আলাদা আলাদা দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। সেই দিক থেকে নির্ভার রয়েছে বিএনপি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৭৫তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-২) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ