বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৩
৭ নভেম্বর, ১৯৭১
জল্লাদ বাহিনীর মৃত অফিসারদের জন্য কাঠের বাক্স তৈরি করা হচ্ছে এবং সেটা হচ্ছে ব্যাপকহারে। বেচারা কাঠমিস্ত্রীর শান্তি বা স্বস্তি নেই। দিন-রাত তার কাজ- বাক্স বানাও। মরা লাশগুলোকে জলদি পাঠাও নিজের দেশের মাটিতে। কারণ? কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, বাংলার মানুষ যেন বুঝতে না পারে যে বর্বরবাহিনীর অফিসারগুলো একে একে লোপাট হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়, বাংলার মাটিতে ওদের ঠাঁই নেই। কেননা ওরা বাংলার নয়। বাংলার মাটির এতটুকু দরদ নেই ওদের জন্য। বাংলা শুধু বাংলাদেশের জনগণের। এখানের সাহিত্য-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কৃষ্টি সব এদেশেরই। এসবেই বেড়ে উঠেছে সবুজ কোমল লতার মতো বাংলার মাটি থেকে। তাই এ মাটিতে কি ঠাঁই পেতে পারে যারা বাঙালী বিদ্বেষী, যারা বাংলার পয়লা নম্বরের দুশমন? কখনোই না।
হিংস্র পশুদের খাঁচা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল বাংলার শ্যামল প্রান্তর আর জনপদে। লোভী, বিবেকহীন পশুর দল দিকদিশাহীনভাবে চালিয়েছে অত্যাচার, হনন আর সন্ত্রাসের রাজত্ব।
কিন্তু তারপর? কূল আর রক্ষা হয় না। চারিদিক থেকে আঘাত হানছে বাংলার মানুষ। পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে, জলে-স্থলে যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে, অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তাদের খতম করেছে। এখন শয়তানদের পথ চলতে ভয়, ঘরের মধ্যেও নেই স্বস্তির আশ্রয়।
এজন্যেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য রাইফেল দেখিয়ে টেনে নিয়ে আসছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে। তাদের আড়ালে এগিয়ে আসছে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখে। কিন্তু এতেও কূল রক্ষা হচ্ছে না। তীক্ষ্ণধী, সদাজাগ্রত বাংলার প্রহরী মুক্তিবাহিনী তাদের কৌশল ধরে ফেলেছে। পাল্টা এমন আঘাত হানছে যে দস্যুর দল ‘পরি কি মরি’ করে পালাতে দিশা পাচ্ছে না।
ভীতসন্ত্রস্ত জল্লাদবাহিনী শহরের চারপাশে নদীর ধারে গড়েছে বাঙ্কার, বসিয়েছে মেশিনগান। কিন্তু রাতের অন্ধকারে গা মিশিয়ে এসে মুক্তিবাহিনী আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের উপর, তাই কোন কিছুতেই বিশ্বাস নেই। নদী দিয়ে পানা ভেসে যাবে ওদের সামনে দিয়ে? যদি মুক্তিবাহিনী হয়? মেশিনগানের একটানা গুলি চলে পানার ওপর।
রাতের অন্ধকারে শিয়াল-কুকুরেরও ওদের সীমানা দিয়ে যাওয়ার উপায় নাই। হত্যাকারীদের ধারণা, মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা যে কোন রূপ ধারণ করতে পারে- অতএব দৃশ্যগোচর কোন কিছুতেই ক্ষমা নেই। (তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১০১) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭০
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা