বিএনএ, ডেস্ক : ঝিনাইদহ ৪ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার কন্যা মমতারিন ফেরদৌস ডরিন তার বাবার হত্যাকারিদের বিষয়ে প্রকাশ্যে এতদিন মুখ খুলেননি। অবশেষে ১৯ মে ঝিনা্ইদহে এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে তিনি মুখ খুলেছেন। ডিবি পুলিশের তৎপরতা কমে যাচ্ছে অভিযোগ করে তার বাবার হত্যার মাষ্টার মাইন্ড হিসাবে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর কথা উল্লেখ করেছেন।
ডরিন বলেছেন, মিন্টু ও গ্যাস বাবু ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বসে তার নিহত বাবার ছবি আদান প্রদান করেছেন। পরে কালিগঞ্জে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
১৯শে মে ডরিন যখন ঝিনাইদহে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তার বাবার হত্যাকারিদের মুখোশ খুলে দিচ্ছিলেন তখন কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা একটি চাঞ্চল্যকার তথ্য প্রকাশ করে। কলকাতা সিআইডি পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝিনাইদহ ৪ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুন করার পর তার দেহের মাংস কুচি-কুচি করে কিমা করা হয়। এই জন্য কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া সিয়াম হোসেন কলকাতার নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে দুই হাজার দুই শত টাকা দিয়ে একটি কিমা করার যন্ত্র ক্রয় করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার প্রমাণ লোপাটের জন্যই ওই কিমা করার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল বলে সিআইডিকে জানিয়েছে সিয়াম। সিআইডি এ-ও দাবি করেছে যে, ওই যন্ত্রে পুরো মাংস কিমা করা যায়নি। তাই ছোট ছোট খণ্ড করেও তা ফেলা হয়েছিল নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাঙ্কে। সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম মাংসখণ্ড উদ্ধারও করেছে সিআইডি। সেগুলি মানুষের কি না, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
সিআইডি সূত্রের খবর, খুনের পর সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের দেহের ছবি তুলে তা বাংলাদেশে অবস্থানরত কাজী কামাল ওরফে গ্যাস বাবুকে পাঠিয়েছিল কিলিং মিশন প্রধান আমানুল্লা। মৃতদেহ যাতে কেউ খুঁজে না পায় তার জন্য কিমা এবং খণ্ড করা মাংস সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়ার পর হাড়গুলি ফেলা হয়েছিল ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটির বাগজোলা খালে। তদন্ত চালাতে গিয়ে সিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে সিআইডি ওই স্থান থেকে কুড়িটি মানুষের হাড় উদ্ধার করেছে। সেগুলিও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন সিআইডি।
প্রসঙ্গত গত ১২ মে সীমান্ত পথে কলকাতায় গিয়েছিলেন আজিম। ওঠেন পুরোনো বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ি গোপালের বাসায়। সেখান থেকে ১৩ মে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে শাহীনের ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন তিনি। কলকাতা সিআইডি প্রথমে বাংলাদেশের নাগরিক কসাই জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তার করা হয় সিয়ামকে।
কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ আমানুল্লা ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবু, মিষ্টার ঝিনাইদহ খ্যাত মাষ্টার মাইন্ড মিন্টুসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে। পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গেছে সংসদ সদস্য আনারের বাল্য বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিন। এই ঘটনায় ফয়সাল এবং মুস্তাফিজুর নামে দুই ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এমপি আজীমের মেয়ে ডরিনের ভারত সফর এখনও অনিশ্চিত। নিহত এমপি আজীমের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বলেন, ঈদের আগে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা ডরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ঈদের পর ভারতে যেতে হবে বলে জানান। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওয়ারি জোনের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, ডরিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তবে ভারতে যাওয়ার বিষয়ে ডরিন বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী