।। ইমরান খান।।
বিএনএ, (সাভার) ঢাকা: বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও কিছু মানুষের জীবন পরাধীনতার শিকলে বেঁধে রয়েছে। কেউ কেউ দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে পরাধীন জীবনে দিন কাটাচ্ছে। আবার কেউ স্বামী হারিয়ে পরাধীনতার চাদরে মুড়িয়ে রয়েছে। তেমনি ঢাকার ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হারা একজন নারী মর্জিনা। অন্যের বাসায় কাজ করে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কোনমতে দিন যাপন করছেন।
২০২০ সালের ৯ মার্চ ঢাকার ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা নিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ইজিবাইকে থাকা সাতজন যাত্রীর পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হন। সেই ইজিবাইকে থাকা মর্জিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও বাঁচাতে পারেনি একই গাড়িতে থাকা তার বাকপ্রতিবন্ধী স্বামী শামসুল আলমকে। স্বামীর মৃত্যুতে মর্জিনা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। শামসুলের রেখে যাওয়া ভালোবাসার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বিপাকে রয়েছে মর্জিনা। অন্যের বাসায় কাজ করে ছেলে সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে দুখিনী মর্জিনা।
জানা যায়, মর্জিনার একমাত্র ছেলে সন্তান মো. মারুফ হোসেন (১০)। সে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। অবুঝ সন্তানের বায়না মেটাতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয় মর্জিনার। একে তো অন্যের বাড়িতে আশ্রিত। তার উপর ছেলের অবুঝ মনের বায়না। সবমিলিয়ে দারিদ্রতার কষাঘাতে মর্জিনার দিন কাটছে।
মর্জিনা জানান, আমার স্বামী শামসুল আলম। সে বাকপ্রতিবন্ধী ছিল। ছোটবেলা থেকেই আব্দুল আলীম মেম্বারের বাড়িতে আশ্রিত। আমাকে ১৪বছর আগে বিয়ে করে সেই বাড়িতেই নিয়ে আসে। বিয়ের ২ বছর পরে আমাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে কোনমতে দিন পার করছিলাম। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় আমার স্বামী মারা যায়। ভেঙ্গে যায় সাজানো ছোট সংসার ও ছেলের ভবিষ্যত।
মর্জিনা আরও বলেন, আমার ছেলে মারুফকে নিয়ে অতি কষ্টে আছি। মারুফ ফাইভে (পঞ্চম শ্রেণি) পড়ে। ছেলে ভবিষ্যত অনিশ্চিত। পড়ালেখা করাতে টাকা পয়সা লাগে। ঠিক মতো খেতেই পাইনা। লেখাপড়া করামো কেমনে। আছি অন্যের বাড়িতে। আজ আছি ক্যাল নাই। তখন কোথায় যামু। স্বামী মইরা যাওয়ার পর আমার ও ছেলের স্বপ্ন ভাইঙ্গা গেছে। এহন আর স্বপ্ন দেহি না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শামসুল আলম ছোটবেলা থেকেই আব্দুল আলীম মেম্বারের বাড়িতে থাকতো। বাকপ্রতিবন্ধী থাকায় ওর নিজের বাড়িতে ঠাঁই হয় নাই। আব্দুল মেম্বার শামসুলকে নিজের ছেলের মতোই আদর করত। সড়ক দুর্ঘটনায় শামসুল মারা যাওয়ার পর ৫ শতাংশ জমি মারুফের নামে লিখে দেয়।
স্থানীয় সোহেল রানা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় শামসুল মারা যাওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসন দেখতে এসেছিল। মর্জিনার অবস্থা খারাপ দেখে ইউএনও একটা বাড়ি করে দিতে চেয়েছিল। তাই মর্জিনার ছেলের নামে জায়গা লিখে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঘর পায়নি মর্জিনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা উপজেলা প্রশাসন যদি এই এতিমদের ওই জায়গাতে বাড়ি করে দেয় তাহলে অন্তত ওদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এরআগে যে ইউএনইউ ছিল সে তালিকায় তার নাম উঠিয়েছে কিনা খোঁজে দেখতে হবে। যদি উঠে থাকে তাহলে দ্রুত তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। আর যদি তালিকায় নাম না উঠে থাকে তাহলে সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য হলে ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
বিএনএ/এমএফ