19.5 C
আবহাওয়া
৭:১৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » খাবারের দাম বেশি : চুয়েট শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস

খাবারের দাম বেশি : চুয়েট শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস


বিএনএ, চুয়েট : খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে অভিযোগ করছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে খাবারের এই চড়া দাম নিয়ে বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। গত ১ সপ্তাহ জুড়ে এ ক্ষোভ চরমে পৌছেছে।

চুয়েটের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম ও নিম্নগামী মান এর মূল কারণ বলে জানা যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নাম্বার ও দুই নাম্বার ক্যান্টিন বন্ধ হওয়ার পর ক্যাফেটেরিয়া একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ পাওয়ায় এই সমস্যা বেড়েই চলেছে। প্রসঙ্গত, উক্ত ক্যান্টিন গুলো ছিলো সুলভ মূল্যে খাবার লাভে শিক্ষার্থীদের অন্যতম ভরসা।

চুয়েটের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ইবরাহীম হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ” শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ নিম্নবিত্ত পরিবারের হওয়াতে আধপেটা খেয়েই দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে তাদের, তাদের মৌলিক চাহিদা এখন হুমকির মুখে”

পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজিয়া আহমেদ রাফা এই বিষয়ে বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যান্টিন এ খেয়েছি। খাবারের মান এবং দাম তুলনা করলে সব দিক থেকেই চুয়েটে অতিরিক্ত দাম মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর খাবারের দাম শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত ছিল।”

এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার খাইরুল হোসেন বলেন, “বাজারের উঠতি মূল্যের কারণে আমাদের এখানে দাম এমন । আমরা চেষ্টা করি খাবারের দাম আর মানের যাতে ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানের সকল মূল্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত এবং মূল্যের তালিকা সবসময় টাঙানো থাকে। এই দাম থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই। ”

দামের দিক থেকে একই অবস্থা চুয়েটের তিন নাম্বার ক্যান্টিনেরও। বাড়তি দামের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা নিয়েও মিলছে নানান অভিযোগ। তাছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালীন সাধারণত চালু থাকে এই ক্যান্টিনটি। টিএসসির অবস্থান দূরে হওয়াতে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের এখান থেকেই খাবার কিনতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের আলাদা তেমন কোনো আয়ের উৎস থাকে না। পড়াশুনার পাশাপাশি টুকটাক টিউশনি করিয়ে অনেকেই নিজের ভরণপোষণ করেন। আবার অনেককেই সেই টাকা থেকে বাড়িতেও পাঠাতে হয়। সব মিলিয়ে এতো মূল্য দিয়ে নিয়মিত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

চুয়েট শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দুইবেলা আবাসিক হল ডাইনিং এ খাওয়া দাওয়া করে থাকেন। চুয়েটের কয়েকটি হলের ডাইনিং ম্যানেজারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের পক্ষে ৪০ টাকায় প্রতিবেলা সুষম খাবার সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি যে খাবার খান তাতে কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় উপাদানের অনুপাত ৪:৪:১ হওয়া প্রয়োজন। পরিমাণ কম হওয়ায় ডাইনিং এর খাবারের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা কষ্টসাধ্য।

শামসেন নাহার খান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, “হলের ক্যান্টিনে খাবারের দাম খুব একটা বেশি নয়। তবে মান কিছুটা অস্বাস্থ্যকর। আগে মোটামুটি ভালো খাবার পাওয়া গেলে এখন সবসময় খাবার পাওয়া যায় না। রাত ৮ টার পর এই সমস্যা আরো বেশি দেখা যায়। খাবারের এই অপ্রাপ্যতার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরাই সমস্যায় ভুগছি। ”

চুয়েটের প্রধান ফটকের বাইরের দোকানগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। এখানেও চওড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার। মোট কথা কোথাও স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে খাবার পাচ্ছে না চুয়েট শিক্ষার্থীরা।

পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন ইশতিয়াক বলেন, “চুয়েটের ভিতরে দাম আর মানের সামঞ্জস্য না থাকায় আমরা অনেকেই বিকালের নাস্তার জন্যে চুয়েটের গেইটের সামনের দোকানগুলোতে যাই। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। অতিরিক্ত দামের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত ১-২ বছর ধরে সকল ধরণের খাবারের দাম শুধু বেড়েই চলেছে। ”

এ ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, খাবারের মান ঠিক রাখতে গেলে এর চেয়ে দাম কমানো সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়টিও সবার মাথায় রাখতে হবে। তাও শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে দেখবো কোন সমাধানে আসা যায় কি না। ১ ও ২নং ক্যান্টিনের বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তমঞ্চ করার জন্য এগুলো ভেঙে ফেলা হবে। তাই এগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

বিএনএ/ মোহাম্মদ ইয়াসির আফনান,ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ