বিএনএ ঢাকা: র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে জাতিসংঘকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চিঠি দেয়াটা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে র্যাবকে কলুষিত করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশমাররফ আরও বলেন, সরকারের দুই মন্ত্রী বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে গায়েবি তথ্য দিয়েছেন। জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাতে গিয়ে কল্পিত লবিস্ট ফার্মের সংখ্যা এবং ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তারা ফেঁসে গেছেন। নিজেদের দুর্নীতি, অপশাসন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশে যে সমালোচনার ঝড় বইছে তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাদের ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত সরকারের হতাশ মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য জনগণ অক্ষমের আর্তনাদ বলে গণ্য করেছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন—বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে। তার একটি ফার্মকেই ১০ লাখ অর্থাৎ ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। অন্য ৭টি ফার্ম সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো সব তথ্য আছে। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি। তথ্যমন্ত্রী আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন—বিএনপি বিভিন্ন নামে ১২টির বেশি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু কে, কার সঙ্গে, কতো টাকার চুক্তি করেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। অথচ, সত্য যে, বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনও নেয়নি। লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। লবিস্টরা যেসব কথা বলবেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ তা নিজেরাই বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না প্রকাশ্যে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যে সব পত্রের কপি সাংবাদিকদের দিয়েছেন, তাতে কোথাও এমন কোনো বক্তব্য নেই যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে বলেননি। মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিম্বা আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। এসব বক্তব্যের কোনোটাই জনগণ কিম্বা দেশের স্বার্থবিরোধী তো নয়ই বরং জনগণ ও দেশের পক্ষে বিএনপির নৈতিক অবস্থান।
ড. মোশাররফ বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের দাবি, তারা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেননি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, একটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফোকে নিয়োগ দেন। ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে যা কার্যকর হয়। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র ১ মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফিতে নিয়োগ করা হয়েছিল আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ফ্রিডল্যান্ডারকে। এ ব্যাপারে কেঁচো খুড়তে গেলে আরও বহু বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসবে। এসব চুক্তি সম্পর্কে জেনে না থাকলে সরকার ও সরকারদলীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বহীন এসব মন্ত্রীদের বিজ্ঞের মতো কথা বলা বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ড. মোশাররফ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান।
বিএনএনিউজ/আরকেসি