বিএনএ, কক্সবাজার : মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে গড়ে ওঠেছে দেশের বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেকারণে কক্সবাজারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অচিরেই কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কার্যক্রম।
রোববার(১৯ সেপ্টেম্বর)কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে বর্তমান এবং আগামীতে মহেশখালী, মাতারবাড়ি, সাবরাংয়ে যে সমস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অচিরেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অফিস স্থাপন করা হবে।কক্সবাজারের জন্য নতুন হলেও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কার্যক্রম চলছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করা।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৩ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সুলাইমান, সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন।
সভায় বক্তব্য রাখেন- শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনা পরিষদের সদস্য সাহেদ আলী এবং মোহাম্মদ আলমগীর, ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম, মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আবু সেন্টার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সনজিদ দত্ত, পাস্তা ক্লাব পরিচালক অনিক বাপ্পি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- চেম্বার পরিচালক এমদাদুল হক, নুরুজ্জামান, আজমল হুদা, সাধারণ সদস্য উদয় শংকর পাল মিঠু, প্রকল্প সমন্বয়কারী অশোক সরকার।
চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশিংয়ের মহতী উদ্যোগ নিরাপদ বিনিয়োগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। বর্তমান সময়ে ই-কমার্স একটি উদীয়মান দ্রুত অগ্রসরমান সেক্টর। একে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশিংয়ের আওতায় আনা গেলে ভোক্তা এবং উদ্যোক্তাদের মাঝে বিশ্বাসের জায়গাটা আরও সুদৃঢ় হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের জেলা কক্সবাজারের ৭৭টি সাইটে এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে।সাগর ছোঁয়া রানওয়েতে দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই উঠানামা করবে বিমান- এমন রূপে সাজছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।কক্সবাজারের পর্যটনের বিকাশ ও গভীরসমুদ্র বন্দর কেন্দ্রিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগও স্থাপন হচ্ছে। এটি চালু হলে পর্যটন নগরীর সঙ্গে অবিরাম যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু সড়কপথের ওপর আর নির্ভর করবে না।কেবল যোগাযোগ অবকাঠামোই নয়, দেশের অর্থনীতির প্রধান গেম চেঞ্জার হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর- বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণ হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর।
কক্সবাজার ঘিরে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিমানবন্দর, রেললাইন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এসপিএম প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল এক এক করে ২০২৩ সালের মধ্যে চালু হলে পাল্টে যাবে কক্সবাজারের চিত্র। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে মহেশখালী ইকোনমিক জোন দ্বীপভিত্তিক বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ নেবে।
কক্সবাজারের দূর্গম দ্বীপ মাতারবাড়িতে ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ল্যান্ডবেইজ এলএনজি টার্মিনাল, চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা এবং ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন স্থাপনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল কর্মযজ্ঞ অঞ্চলটিকে ইতোমধ্যেই জাপান, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য আকষর্ণীয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রিক বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করতে সাবরাং, নাফ ও সোনাদীয়ায় তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের কাজও চলছে। স্বাধীনতার পর অবকাঠামো ও বিনিয়োগে পিঁছিয়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান কক্সবাজার জুড়ে প্রায় ২৫টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৭টি বাস্তবায়নের কাজ চলছে, যা পাল্টে দেবে জেলার রূপচিত্র।
এসব প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি, যা এক বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের মোট বরাদ্দ দেওয়া অর্থের দেড় গুণ।
বিএনএ/ ওজি