29 C
আবহাওয়া
২:৫৪ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৪ (ঢাকা-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৪ (ঢাকা-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৪ (ঢাকা-১)

বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা – ১ আসনের হালচাল।

YouTube player

ঢাকা-১ আসন 

ঢাকা – ১ সংসদীয় আসনটি দোহার এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৯০ হাজার ৭শত ৩৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ১ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহবুবুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ২ শত ৪৫ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮৬ হাজার ৭ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৯ হাজার ৪ শত ২০ জন। নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ১শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাসেম আলী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২০ হাজার ৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজয়ী

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১৯ হাজার ২ শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ৩৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৩ শত ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৫ শত ৭৬ ভোট।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮ শত ৩৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬ শত ৮০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮ শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল মান্নান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ৪ শত ৪০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯ শত ৫৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৩ শত ৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান খান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৬ শত ৯০ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪ শত ৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩২ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে সালমান এফ রহমান , ধানের শীষ বিএনপির খোন্দকার আবু আশফাক, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির আবিদ হোসেন, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারার জালাল উদ্দিন, গোলাপফুল প্রতীকে জাকের পার্টির সামশুদ্দিন আহমেদ, কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সেকেন্দার হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের কামাল হোসেন এবং মটরকার প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ২ হাজার ৯ শত ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলাম। মটরকার প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪৭ হাজার ১ শত ৯৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ,অষ্টম, সংসদে বিএনপি নবম, ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ, দশম সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.৭২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.৪৩%, বিএনপি ৬০.৭৮%, জাতীয় পাটি ০.৪১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৩৮% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.০৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৮২%, বিএনপি ৫৪.৯৯% জাতীয় পাটি ৮.৮৩%,জামায়াত ইসলামী ১.৪৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৮৭% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.৪৭%, ৪ দলীয় জোট ৫১.৪১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.০১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৪.৭৫%, ৪ দলীয় জোট ৪২.৬৬%, , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৫৯% ভোট পায়।

ঢাকা-১ (নবাবগঞ্জ ও দোহার) আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবে এই আসনে আওয়ামীগের আরও একজন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। তিনি হচ্ছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান। তিনিও মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খোন্দকার আবু আশফাক। তিনি এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টির ঢাকা জেলা সভাপতি ও মহিলা পার্টির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তিনি জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে তিনি মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপি বিজয়ী হয়। এখন বিএনপি সেখানে অনেকটাই হিসাব-নিকাশের বাহিরে। আসনটিতে আরো দু’জন শক্ত প্রার্থী সালমান এফ রহমান ও সালমা ইসলাম। তারা দু’জনই দেশের দুই শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সালমা ইসলামকে মনোনয়ন দেয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্ধীতা করে হেরে যান তিনি। গত ৫ জুন নবাবগঞ্জের বর্ধনপাড়ায় ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সালমা ইসলামককে দলীয় প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই দুই ধনকুবেরের লড়াই দেখা যেতে পারে বলে ধারণা দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর।
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বেশ মজবুত। ভোটের মাঠে বিএনপি ফ্যাক্টর। একাদশ সংসদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন খোন্দকার আবু আশফাক। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তার পদত্যাগ পত্র ঢাকা জেলা রিটার্নিং অফিসারের অফিসে না যাওয়ায় প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে। জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ঐক্য না হলে এই আসনটিতে সমঝোতা নাও হতে পারে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৭৪ তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-১) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্ব-স্ব প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলে সেক্ষেত্রে এই আসনে বিএনপিই বিজয়ী হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি,ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ