বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৩
বস্তুতপক্ষে ২৮শে জুনের পরে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মুখপাত্র এবং এবং প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে যেসব বক্তব্য বলেছেন, তাদের প্রত্যেকটি থেকেই একথা বুঝতে পারা যায় যে, এইসব মুখপাত্র এবং প্রতিনিধি ইয়াহিয়া খানের বাচনকে আমলেই আনেননি। নিউজিল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিম জার্মানীর পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী বাংলাদেশ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক মীমাংসাসুত্রের জন্যেই তাগিদ দিয়েছেন। এটা ধরে নেওয়া যায়, তারা কূটনৈতিক সূত্রে ইয়াহিয়া খানের রাজনৈতিক সমাধান সূত্রগুলিকে প্রত্যাখান করেছেন।
কানাডা আর আয়ারল্যান্ডের আইন পরিষদের যেসব সদস্য বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছেন, তাদেরও একই কথা। তারা স্বচক্ষে দেখে যাচ্ছেন, বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খানের রাওয়ালপিন্ডি চক্রের জল্লাদেরা একটা গোটা জাতিকে সাড়ে সাত কোটি নরনারী-শিশুকে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কি ধরনের হত্যাকান্ড করেছে।
বাংলাদেশের প্রশ্নে রাজনৈতিক সমাধানের যে তাগিদ তাঁরা দিয়েছেন তাতে বুঝতে পারা যায়, ইয়াহিয়ার বাচনকে তাঁরা ঝাড়া অগ্রাহ্য করেছেন। গোটা বাঙালী জাতিকে নিধন করার জন্যে পাকিস্তানী শাসকচক্র যে ষড়যন্ত্র চালিয়ে এসেছে এতদিন, ইয়াহিয়ার বক্তব্য তারই একটা বেতালা পদক্ষেপের মহড়া ছাড়া যে আর কিছু নয় সে কথা আজ বিশ্বের মানুষ বুঝে নিয়েছে। পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন সমাজতন্ত্রী দেশ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে তাঁদের সমর্থন জানিয়ে আসছে।
সর্বশেষ সংবাদে দেখা গেল, চেকোশ্লোভিয়ার কর্মকর্তারা সরকারীভাবে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশের ব্যাপারে রাজনৈতিক মীমাংসার জন্যে তাগিদ দিয়েছেন। এর সোজা অর্থ এই যে, ইয়াহিয়া খানের রেডিও বাচনকে তাঁরা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। এটাই সত্য, এটাই বাস্তব, এটাই বর্তমান, এটাই ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ নিজের শাসনতন্ত্র নিজেরাই তৈরি করবে। দুনিয়ার দেশ-দেশান্তরের কাছে এই ঘটনা অনিবার্য অপ্রতিরোধ্য ঘটনা হিসেবে উন্মোচিত হয়ে চলেছে। ইয়াহিয়া খানেরা মিথ্যা। স্বাধীন বাংলাদেশ সত্য। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি নরনারী-শিশু বুকের রক্ত ঢেলে এই সত্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের মুক্তির দিনকে এগিয়ে নিয়ে আসছেন।
(‘জামিল শারাফি’ ছদ্মনামে রগেশ দাশগুপ্ত রচিত)
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৯২) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৯
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা