27 C
আবহাওয়া
১:৪৮ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকি: ‘প্রক্টর-সাংবাদিক খাই না’

ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকি: ‘প্রক্টর-সাংবাদিক খাই না’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনএ, চবি: ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক খাই না। প্রক্টর খাই না।’ এভাবেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৯ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দেওয়া এক লিখিত পত্রে এ অভিযোগ করেছেন চবিসাস সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ ১০ কর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত দশজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা সবাই ইলিয়াসের অনুসারী। একইসাথে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী তারা।

ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকি: ‘প্রক্টর-সাংবাদিক খাই না’
অভিযুক্ত অন্য ছাত্রলীগকর্মীরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের ওরফে তারকাটা নিলয়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওয়ায়দুল হক লিমন, একপি শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ ওরফে গাঞ্জুটি রানা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশিষ দাস, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবির আহমেদ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রমিত রুদ্র ও একই শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জাহিদুল ইসলাম।
কিছুদিন আগেও স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, মারধরসহ বেশকিছু অভিযোগ উঠেছিল এদের বিরুদ্ধে। মাদক সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ আছে এদের অনেকের বিরুদ্ধে। নিলয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরির সাথে জড়িত।
অভিযোগপত্রে চবিসাস জানায়, ‘আলাওল হলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব ব্লকে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরাসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের আসন রয়েছে। অনেকদিন ধরেই শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নামধারী, সুনাম বিনষ্টকারী কর্মী সাংবাদিকদের অবস্থানরত কক্ষের প্রতি দখলদারি মনোভাব পোষণ করছে।করোনা মহামারীর ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর দেখা যায় এই ব্লকের ওয়াইফাইয়ের তার চুরি হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ছাত্রলীগকর্মী নিলয়ের কক্ষে তার লুকিয়ে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে বারবার তারটি ফেরত দিতে বলা হলেও সে কোনরকম ভ্রুক্ষেপ করেনি। প্রায় দুই মাস পর আমরা নিজ থেকেই কেটে ছোট করে ফেলা তারটি উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এরপর ২০৯ ও ২০২ নম্বর কক্ষ দখলের চেষ্টা ও হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা তাদের সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা এবং তৎকালীন হল প্রভোস্টের মধ্যস্থতায় সেসব বিষয় সমাধান করি।’ ‘সর্বশেষ গত ১৫ জুন রাত প্রায় দেড়টার দিকে আমাদের ব্লকে এসে নিলয়সহ ৫-৭ জন শিক্ষার্থী হৈ-হুল্লোড় করে চলে যায়। পরদিন ১৬ জুন রাত বারোটার দিকে নিলয়সহ ১৫-২০ জন আমার কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার রেশ ধরে চিল্লাচিল্লি ও গালিগালাজ করতে থাকে। অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের হেনস্থা করে তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর আরও দুই দফা এসে তারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে থাকে।’ ‘
তাদের বক্তব্য ছিলো এরকম- ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক খাই না। প্রক্টর খাই না।’ ‘ছাত্রলীগকর্মীরা বারবার চবিসাস সভাপতির কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের মারার জন্য উদ্যত হয় এবং গায়ের  ওপর চড়াও হয়। এছাড়া তারা বেশ কয়েকবার রুমের বাতি বন্ধ করে দিয়ে রুম ভাঙচুরের চেষ্টাও করে। পুরো ব্লকের বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এসময় অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ ও ওবায়দুল হক লিমনসহ সবাই অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালি দিতে থাকে। যা যেকোনো সভ্য মানুষের রুচির সাথে সাংঘর্ষিক।’ ‘বিষয়টি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াসকে জানানো হলে তিনি দেখছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপরও সাংবাদিকদের হেনস্তা অব্যহত রাখায় মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ইলিয়াসের পরোক্ষ মদদেই মূলত তারা বারবার এরকম ঘৃণ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করার সাহস পায়।’
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে। যেকোনো প্রয়োজনে চবিসাসের পাশে আছি আমরা।’
তবে এ বিষয়ে জানতে বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। আর আমরা আমাদের মতো তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘সাংবাদিক না শুধু, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথেও কেউ খারাপ আচরণ করলে আমরা শক্তভাবে ব্যবস্থা নিব। তাদের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ আছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।’
বিএনএ/নবাব, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ