বিএনএ, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি কর্মচারিদের কাজের প্রতি মনযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে অতীতের মত ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ সেই বিষয়টি বর্তমানে নেই। অন্তত সকলের কাজের প্রতি একটা আন্তরিকতা আছে, দেশটাকে নিজের মনে করার এবং সেভাবেই কাজটি করার। সেই মানসিকতাটা তৈরী হয়ে গেছে, এটিই হচ্ছে সব থেকে আশার ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার (১৯ মে) সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সভাপতিত্বকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে এবং শেরেবাংলা নগরের এনইসি কনফারেন্স রুম, পরিকল্পনা কমিশন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্র্চুয়ালি বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজকে নিজের মনে করার মানসিকতা এবং আন্তরিকতা না থাকলে নিজে যেমন আগানো যায় না দেশকেই উন্নত করা যায় না।
তিনি এ সময় প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ভূমিকায় লেখা জাতির পিতার বক্তব্য উদ্ধৃত করেন এবং বলেন, এই কথাগুলো মনে হয় যুগ যুগ ধরেই আমাদের কাজে লাগবে।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘নো প্ল্যান হাওএভার ওয়েল ফরমুলেটেড কেন বি ইপ্লিমেন্টেড আনলেস দেয়ার ইজ এ টোটাল কমিটমেন্ট অন পার্ট অব দ্য পিপল অব দ্য কান্ট্রি টু ওয়ার্ক হার্ড এন্ড মেক নেসেসারি সেক্রিফাইসেস। অল অব আস উইল দেয়ার ফর হ্যাভ টু ডেডিকেট আওয়ার সেলফস টু দ্য টাস্ক অব নেশন বির্ল্ডিং উইথ সিঙ্গেল মাইন্ড ডিটারমিনেশেন।’
তিনি বলেন, যত প্লান প্রোগ্রাম- আমরা যাই করি না কেন, সেটাকে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি। যদি আমরা নিজেদেরকে কাজের সঙ্গে একেবারে বিলীন করে নিতে পারি এবং দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দেশের কল্যাণের জন্য নিজের যতরকম আত্মত্যাগ করা দরকার সেই আত্মত্যাগ করবার মানসিকতাটা নিয়ে যদি আমরা দেশের জন্য কাজ করি, তবেই, কিন্তু এটা কার্যকর হবে। তা না হলে এটা কার্যকর হবে না।
অতীতে বিএনপি সরকারের সময় বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে বাংলাদেশের রেল বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের কোন ক্ষতি হয় এমন কারও কোন পরামর্শ গ্রহণ করবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় (অন্যের) পরামর্শেই দেশ চলেছে, কিন্তু আমি এটা করবো না। কারণ, দেশটা আমাদের এবং আমরাই ভাল জানি কিসে দেশের এবং জনগণের উন্নতি হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। সবসময় খালি পরমুখাপেক্ষী থাকলে হবে না। সেই উৎসাহটা দেবেন আপনারা, সেটাই চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটা আমাদের আমরা জানি কিভাবে দেশের উন্নতি করতে হবে। তবে, পরামর্শ নেব আমরা। তবে, সেই পরামর্শটা এমন হবে না যেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর।
প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দেন, দেশের জন্য রেল কল্যাণমুখী হলেও বিএনপি দাতা গোষ্ঠীর পরামর্শে রেল বন্ধ করে দেওয়ার পুরো বন্দোবস্থো করে ফেলেছিল। কর্মচারী ছাটাই, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সবকিছুর ব্যবস্থাই হয়েছিল। কিন্তু, আমরা সরকারে এসেই এরজন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দসহ রেলকে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিলাম।
তিনি বলেন, পৃথক মন্ত্রণালয় করার উদ্দেশ্যই হলো আলাদা বাজেট পাবে এবং আমরা সমগ্র বাংলাদেশে রেল যোগাযোগটা পুণরায় চালু করবো। আমরা সেটা চালু করেছি।
তিনি বলেন, রেল এবং পর্যায়ক্রমে পাবলিক বাস যাতে পাবলিক চলাচল করে তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংকের একটা পরামর্শে। কিন্তু আমরা সবগুলোই চালু রেখেছি এবং যার সুফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে, এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তখনই, যখন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নত হবে। এগুলো না হলে কোন দেশের উন্নয়ন হতে পারে না।
তিনি বলেন, নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে আমাদের শুধু সড়ক পথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে চলবে না। সড়ক পথ, নৌ পথ, রেল পথ এবং বিমান সবই লাগবে আমাদের এবং আমরা সেভাবেই দেশটাকে সাজাচ্ছি।
রেলের প্রতি এখন মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে এবং উত্তরোত্তর এটি আরো বাড়ুক তাঁর সরকার এটিই চায় এবং যেসব জায়গায় রেল যোগাযোগ নেই তাঁর সরকার সেটিই স্থাপন করবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।