বিএনএ, কক্সবাজার: সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা বিশাল আকৃতির মৃত তিমির শরীরে মাছ ধরার জাল প্যাঁচানো ছিল। তিমিটির মাথায়ও ছিল আঘাতের চিহ্ন। সমুদ্রবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে গভীর সাগরে মাছ ধরার ট্রলার কিংবা ট্রলিং জাহাজের পাখার (প্রপেলার) আঘাতে ও জালে আটকে পড়ে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার(১৯ এপ্রিল) ভোরে কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী পয়েন্টের (সায়মান বিচ রিসোর্টের সামনে) বালুচরে মৃত তিমির দেহ পুঁতে ফেলা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতে মারা যাওয়া তিমিটি ভাসতে দেখেন স্থানীয় জেলেরা। বিকেল চারটা পর্যন্ত রশি বেঁধে তিমিটি কূলে তুলে আনার চেষ্টা হয়েছিল।
তবে বিশাল আকৃতির দেহটি টেনে আনা সম্ভব হয়নি। পরে ভাটা শুরু হলে স্রোতের টানে তিমিটি গভীর সাগরের দিকে ভেসে যেতে থাকে। আজ ভোরে জোয়ারের সময় মারা যাওয়া তিমিটি পুনরায় সৈকতের কলাতলী পয়েন্টের কাছে ভেসে আসে।
সৈকত রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের একজন বিচকর্মী বলেন, ভোর চারটার দিকে বাতাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ ভেসে এলে তাঁদের সন্দেহ হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে দেখেন, হিমছড়ি সৈকতে আগের দিন ভাসতে থাকা তিমিটি কলাতলী সৈকতে চলে এসেছে। পরে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বন ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিমিটি বালুচরে দ্রুত পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করেন। এর আগে পরীক্ষার জন্য তিমির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, গভীর সমুদ্রে বিচরণের সময় সম্ভবত তিমিটি মাছ ধরার ট্রলার কিংবা ট্রলিং জাহাজের ধাক্কা খেয়েছিল। অথবা জাহাজের প্রপেলারে আঘাত পেয়েছিল। মরা তিমির মাথায় আঘাতের একাধিক চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজের ধাক্কা খেয়ে তিমিটি ওই ট্রলারের জালে আটকে পড়েছিল। এ কারণে তিমিটির মৃত্যু হয়। তিমির নমুনা পরীক্ষা ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
মরা তিমিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪২ ফুট, পেটের কাছের ব্যাস ২৪ ফুট, লেজের পাশের ব্যাস ১৪ ফুট। তবে শরীরে পচন ধরায় এর লিঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দায় বলেন, সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার পর মরা তিমির লিঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। অর্ধগলিত মরা তিমিটি ব্রাইডস প্রজাতির। এ প্রজাতির তিমির ওজন ১২ থেকে ২৫ মেট্রিকটন এবং দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫১ ফুট হতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতে মারা যাওয়া তিমিটি ভাসতে দেখেন স্থানীয় জেলেরা।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, মরা তিমিটি আজ ভোরে জোয়ারে ভেসে কলাতলী সৈকতের দিকে চলে আসে। পরে তিমিটি উদ্ধার করে বালুচরে গর্ত খুঁড়ে পুঁতে (বালুচাপা) ফেলা হয়েছে। এর ফলে আর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে না। তিমির মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালাচ্ছেন।
এর আগে ২০২১ সালের এপ্রিলে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে দরিয়ানগর ও হিমছড়ি সৈকতে বিশাল আকৃতির দুটি মৃত তিমি ভেসে এসেছিল।
বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার