শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের আফ্রিকান জলহস্তী পরিবারে এসেছে নতুন অতিথি। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায় যে সদ্য জন্ম নেওয়া ওই শাবক তার মায়ের সঙ্গে খুনসুটি করছে। মায়ের পেছন পেছন বেষ্টনীর পুকুরের পানি থেকে পাড়ে আবার উঠে আসছে। পুকুরে লুকোচুরি খেলছে মায়ের সঙ্গে।
বুধবার(১৭নভেম্বর) বেলা ১১টায় সাফারি কিংডমের জলহস্তী বেষ্টনী ঘিরে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা দেখছেন সেই জলহস্তী শাবকের খেলা।
জটলার কারণ হিসেবে কাছে যেতেই দেখা মিলল সদ্য জন্ম নেওয়া একটি শাবকটি। শাবকটি বেশ কিছু সময় পুকুরে অবস্থানের পর আবার মায়ের সঙ্গে গভীর পানিতে মিশে যাচ্ছে; আবার গভীর পানির মধ্যে মাঝে মধ্যেই গা ভাসিয়ে দর্শনার্থীদের বিনোদন দিচ্ছে শাবকসহ পার্কে থাকা জলহস্তীগুলো।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, ধারণা করা হচ্ছে— গত ২১ অক্টোবর সাফারি পার্কের জলহস্তী পরিবারে নতুন শাবকের জন্ম হয়। গত কয়েক দিন থেকে নতুন শাবককে তার মায়ের সঙ্গে ডাঙ্গায় ঘুরতে দেখা যায়। বর্তমানে পার্কে নতুন শাবক নিয়ে জলহস্তীর সংখ্যা দাঁড়াল তিনটি। তবে নতুন এ শাবকটি পুরুষ না স্ত্রী তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, জলহস্তী আফ্রিকান তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা পানিতে জলজ উদ্ভিদ খেয়ে জীবন ধারণ করে। জলের সঙ্গে ডাঙায়ও এরা বসবাস করতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত শিকার ও চোরাচালানের কারণে ২০০৬ সালে জলহস্তীকে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় স্থান দিয়েছে। জলহস্তীকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সাধারণত জলহস্তীর দৈর্ঘ্য সাড়ে ১০ ফুট, উচ্চতা সাড়ে ৪ ফুট এবং ওজন তিন হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা নিশাচর প্রাণী। রাতের বেলায় খাবারের খোঁজে বের হয়। প্রকৃতিতে এরা ৩০ বছরের অধিক সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে। জলহস্তীর গর্ভধারণের সময়কাল ১০ মাস, একটি করে শাবক জন্ম দিয়ে থাকে মা জলহস্তী।
পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, জন্মের পর এখন পর্যন্ত শাবকটি সুস্থ রয়েছে। শাবকটিকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে তার মা। মা ও তার শাবকের পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা করে খাবারের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময়ই মায়ের সঙ্গে শাবকটি পানিতেই থাকছে। সারা শরীর ডুবিয়ে চোখ বের করে কচুরিপানার ভেতরেই সবার লোকচক্ষুর আড়াল হয়ে থাকে সে। তবে মাঝে মধ্যে মায়ের সঙ্গে সে ডাঙ্গায়ও উঠে পড়ে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্ন সময় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি জলহস্তী আনা হয়। এ থেকে ইতিপূর্বে দুটি পুরুষ শাবকের জন্ম হলেও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ জলহস্তীর সঙ্গে মারামারি করে ছোট সময়েই তারা মারা যায়। তবে এবারের শাবকটিকে কড়া নজরে রাখছে তার মা। প্রায় এক মাস বয়স হয়েছে। শাবকটির এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই বড় হচ্ছে। আমাদের আশা এবারের শাবকটি হয়তো টিকে যাবে।
বিএনএ, নইমুল ইসলাম সজিব,জিএন