32 C
আবহাওয়া
৯:৫০ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রাম বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

চট্টগ্রাম বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ


বিএনএ,চট্টগ্রাম:  চট্টগ্রাম বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদরাসায় আইন বহির্ভূতভাবে সহকারী শিক্ষক পদে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে দুইজন বন্দর কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয়। আরেকজন বন্দরের একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকার মেয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব অবৈধ নিয়োগের মূল হোতা মাদ্রাসার তৎকালীন সভাপতি চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মো.মমিনুর রশিদ। তার উপস্থিতিতে এসব অবৈধ নিয়োগ কার্যকর করা হয়। এছাড়াও একটা সূত্র বলছে এসব অপকর্মের সঙ্গে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বন্দরের সদস্য ( প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমানও।

এই নিয়োগের বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে গণমাধ্যমে কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে বন্দরের বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’জন নিয়োগে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সাক্ষাৎকারে ডাকা হয় মনোনিত ব্যক্তিদের। কোনো প্রকার লিখিত পরীক্ষা ছাড়া লোক দেখানো সাক্ষাতকারের মাধ্যমে মনোনীতদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যে কারণে নিয়োগপ্রাপ্তরাই শুধু সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন।

দেখা গেছে, নিয়মানুযায়ী মাদরাসার এবতেদায়ির প্রধান শিক্ষক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাদরাসা বোর্ড থেকে ফাজিল পাস। সেখানে বিএসসি পাস একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির মাধ্যমে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মাদরাসাটির সংশ্লিষ্টরা।

স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া তিন শিক্ষক হলেন- সুফিয়া খানম, মো. সোলেমান খাঁন ও অনন্যা বিশ্বশর্মা। তাদের মধ্যে সুফিয়া খানম চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের বোন। মো. সোলেমান খাঁন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমানের নিকটাত্মীয় এবং অনন্যা বিশ্বশর্মা চট্টগ্রাম বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাবিত্রি বিশ্বশর্মার মেয়ে।

অভিযোগ উঠেছে, মাদরাসায় নিয়মবহির্ভূতভাবে এই ৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বন্দরের বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দু’টি নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও আগে থেকে মনোনিতদের নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে মাত্র দুইজন করে প্রার্থী ছিলেন।

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ সোহেল বলেন, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ন্যুনতম তিনজন চাকরির প্রার্থীকে উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষা বাতিল করতে হবে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রসাশন) এর স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, চবক বোর্ড সিদ্ধান্ত ১৮৬৪২ মোতাবেক ‘বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদরাসায় সুফিয়া খানমকে প্রচলিত নিয়মানুয়ায়ী থোক বেতনে নিয়োজিত অন্যান্য শিক্ষকদের মতো মাদরাসায় এবতেদায়ি প্রধানের শূন্য পদে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদরাসার ইবতেদায়ী প্রধান পদে নিয়োগ পেতে হলে মাদরাসা বোর্ড থেকে ফাজিল পাস করতে হয়। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করেছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া তাকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেয়। অথচ এমপিওভূক্ত মাদরাসায় নিয়োগ দেওয়ার কোনো প্রকার ক্ষমতা রাখে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় সুফিয়া খানমকে। ২০২৩ সালে ওই মাদরাসার জন্য সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে একজন গণিত ও একজন পদার্থ বিজ্ঞান/ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এতে তিনজন চাকরির জন্য আবেদন করেন। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তাদের পরীক্ষার জন্য ডাকা হলে আসেন দুইজন। তাদের কাছ থেকে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সাক্ষাতকারের মাধ্যমে মো. সোলেমান খাঁনকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়।

শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছে, এ নিয়োগে নিয়োগবিধি লঙ্গন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য ( প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমানের জোরালো সুপারিশে সোলেমানের চাকরি হয়। শুধু তা নয়, পাঠদানে অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগের জন্য নিজহাতে লিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে দেন বন্দরের এই কর্মকর্তা। অথচ মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি ও নিয়োগ কমিটির কোনো পদে নেই তিনি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স করা এমন একজনকে নিয়োগ দিতে। তার হস্তক্ষেপে তা হয়নি। একইভাবে অনন্যা বিশ্বশর্মা নিয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ। চাকরিপ্রার্থী তিনজনকে ডাকা হলে আসেন দুইজন। নিয়োগ পরীক্ষায় কমপক্ষে তিনজন থাকতে হয়। যার ফলে এই নিয়োগও বিধিসম্মত হয়নি। নিয়োগ কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বন্দর কলেজের অধ্যক্ষ মিতালি পালিত ও ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মমিনুর রশিদের প্রভাবে অনন্যা বিশ্বশর্মাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাদরাসার নিয়োগ কমিটির সদস্য পারভিন আক্তারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুখ খোলেননি। এসব তথ্য মাদ্রাসার সুপার দিয়েছেন কিনা তিনি জানতে চান। নিয়োগ কমিটির উপস্থিতিতে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন।

মাদরাসার সাবেক সভাপতি বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মো.মমিনুর রশিদ বলেন, মাদরাসায় চবক বোর্ড সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুফিয়া খানমকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার এবতেদায়ির প্রধান হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে ফাজিল, সেখানে বিএসসি পাস একজনকে নিয়োগ দেওয়া বৈধ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। আরও দু’জন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তিনজন উপস্থিত থাকার বিধান থাকলে ছিল দু’জন। এ দু’টি নিয়োগ বিধি সম্মত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সেক্রেটারি ও বন্দর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি আবু শাফায়েত মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম বলেন, সরকারি বিধি-বিধানের বাইরে কোনো কিছু হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায় কোনো কিছু সহ্য করা হবে না। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

বিএনএনিউজ/নাবিদ/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ