22 C
আবহাওয়া
৪:২৯ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৬ (সুনামগঞ্জ-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৬ (সুনামগঞ্জ-৩)


বিএনএ, ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সুনামগঞ্জ- ৩ আসনের হালচাল।

সুনামগঞ্জ – ৩ আসন

সুনামগঞ্জ -৩ সংসদীয় আসনটি জগন্নাথপুর এবং দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২২৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪ শত ৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৬ হাজার ১ শত ২১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৭ শত ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির ফারুক রশিদ চৌধুরী । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৭ শত ২৩ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গুলজার আহমেদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির গুলজার আহমেদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ২ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮ হাজার ৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৮ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির ফারুক রশিদ চৌধুরী । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৩ শত ২৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১০ হাজার ৭ শত ৮৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৫ শত ৩৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৪ শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী শাহীনুর পাশা চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৪ শত ৭৫ ভোট।
সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় ২০০৫ সালে মারা যান আব্দুস সামাদ আজাদ। পরে ওই শূন্য আসনে উপনির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৫ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত ৪৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী শাহীনুর পাশা চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৪ শত ৭১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬ শত ২৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৪ শত ৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুস সামাদ আজাদ। ফুটবল প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯০ হাজার ৮ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৬ শত ৬৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান, ধানের শীষ প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী শাহীনুর পাশা চৌধুরী, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহিব্বুল হক আজাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মাহফুজুর রহমান খালেদ, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির শাহজাহান চৌধুরী এবং হারিকেন প্রতীকে মুসলীম লীগের সৈয়দ শাহ মুবাশ্বির আলী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৩ হাজার ১ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী শাহীনুর পাশা চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৯ শত ২৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শুধুমাত্র ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি , পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সুনামগঞ্জ – ৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ – ৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪২.৯৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৭৮%, বিএনপি ১১.৯৪%, জাতীয় পাটি ২৭.৫৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৭৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.২৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৬৭%, বিএনপি ১৬.১৬% জাতীয় পাটি ২৯.৯৩%, জামায়াত ইসলামী ২.৮৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.৩৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৮৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৮১%, ৪ দলীয় জোট ৪১.৮৯%, জাতীয় পাটি ১১.৭১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৫৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৯.৫৬%, ৪ দলীয় জোট ২৯.২৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১৫% ভোট পায়।

সুনামগঞ্জ – ৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।আর ও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক।
বিএনপি থেকে মনোনয় চাইবেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ – ৩ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি । এই আসন থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুস সামাদ আজাদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনবান্ধব হিসাবে পরিচিত হয়েছেন তিনি।

ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের রয়েছে দুটি বলয়। আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। বাবার কারণে মাঠে এবং কেন্দ্রে বেশ প্রভাব রয়েছে ডনের।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়েবড়ে। জনপ্রিয় নেতাও নেই। দলীয় কর্মকান্ড দৃশ্যমান নয়। যুগের পর যুগ এই আসনে দলটি নেতৃত্ব বলয়ের বাহিরে রয়েছে ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২২৬তম সংসদীয় আসন (সুনামগঞ্জ – ৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৫ (সুনামগঞ্জ-২)

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, এমএফ,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ