22 C
আবহাওয়া
১১:০৭ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home »  জাল সনদে কোটায় চাকরি নিয়েছে ডিবি হারুন?

 জাল সনদে কোটায় চাকরি নিয়েছে ডিবি হারুন?


২০১১ সালের ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুককে মারধর করে আলোচনায় আসেন তৎকালীন ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা কুড়ান তিনি। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের প্রতাপশালী কর্মকর্তা বনে যান হারুন। সেই হারুনকে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুক।

YouTube player

গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার মূল কুশীলব ছিলেন হারুন। শুধু তাই নয়, সমন্বয়কদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার ছবি এবং তাদের দিয়ে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। বিচারক এই ঘটনাকে জাতির সাথে ‘মশকরা’ বলে মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, ডিবি হারুন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়কে মারধর করে আটকের পর তার সঙ্গে দুপুরের খাবার খান, সেই ছবি গণমাধ্যমে প্রচার করেন। এরপর হিরো আলম, পরীমনিসহ যারাই তার অফিসে গেছেন তাদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তা গণমাধ্যমে প্রচার করে সস্তা বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করার কারণে ডিবি অফিসের নাম হয়ে ওঠে হারুনের ভাতের হোটেল।
গত পহেলা আগস্ট হারুনকে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)র দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস শাখায় পদায়ন করা হয়। নতুন অফিসে সবশেষ ২রা আগস্ট দায়িত্ব পালন করেছিলেন হারুন। এরপর থেকেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার রাস্তায় জনতার ঢল নামে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলেন। হারুনও তাদের একজন। সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট ভবনের পেছনের প্রায় ১৩ ফুট দেয়াল টপকাতে গিয়ে পায়ে ও শরীরের নিচের অংশে আঘাত পান ডিআইজি হারুন অর রশীদ। পরে সেখান থেকে তিনি আইজিপির সাথে চলে যান পুলিশ সদর দপ্তরে। বিকালে পরিস্থিতি বুঝে পুলিশ সদর দপ্তর সংলগ্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেয়াল টপকে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান হারুন।

তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কূটনৈতিক এলাকায় একটি দূতাবাসে আশ্রয় নেন হারুন। স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে পালাতে যোগাযোগ করেন মার্কিন দূতাবাসে। তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় দূতাবাস। পরে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। এরপর থেকে খোজ নেই ডিবি হারুনের। এর মধ্যে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তার নানা অপকর্ম।

ডিবির হারুন নামেই বেশি পরিচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে।হারুন কিশোরগঞ্জের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন ।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। অথচ তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পান তিনি।

আলোচিত-সমালোচিত পুলিশের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়াসহ অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে। হারুন তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল একটি প্রমোদাগার। এই রিসোর্টে রয়েছে হেলিপ্যাড ও অত্যাধুনিক সুইমিং পুল। হেলিকপ্টারে ও বিলাসবহুল গাড়ি করে প্রতিদিনই রাজনৈতিক নেতা ও বিত্তশালীরা এখানে আসতেন। রিসোর্টটি তাদের আনন্দ-ফুর্তির নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছিল।

মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। এর প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হয়।

রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা অন্যদের। প্রতারণা করে এসব জমি দখলে নেন হারুন। জায়গার মালিকদের কেউই প্রকৃত দাম পাননি। কেউ ১০ লাখের মধ্যে এক লাখ, কেউ ২০ লাখের মধ্যে ২ লাখ এই হারে টাকা পেয়েছেন। দাম না পাওয়ায় এখনো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি।
তাদেরই একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ কুমার বণিক। তিনি জানান, হারুন রিসোর্টের কথা বলে তার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা নিয়েছেন। জমির কোনো দরদামও নির্ধারণ করা হয়নি। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ জমির দাম হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আমার মতো এমন অন্তত আরও ১২ জন রয়েছেন, যাদের নামমাত্র টাকা দিয়ে জমি নিয়ে গেছে হারুন।

জানা যায়, চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় হারুন। দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক। তৃতীয় জিল্লুর রহমান পুলিশের ইনস্পেক্টর হিসাবে কর্মরত। এ ছাড়া হারুনের প্রতিষ্ঠিত বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’-এর এমডি হিসাবে আছেন সবার ছোট শাহরিয়ার।

 

২০২২ সালের ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান হারুন অর রশীদ। তার আগে ২০২১ সালের মে মাসে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হিসেবে গোয়েন্দা বিভাগে পদায়ন হয় তার। এর আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই পদে চাকরির সুবাদে হারুন অর রশীদ শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। তার সম্পদের পরিমাণ সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, বরং বেশি। তার স্ত্রী মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় পাচার করা টাকায় সেখানে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

 

বিএনএ নিউজ, শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ