কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দুই থেকে তিনশোর বেশি দূর্বৃত্ত পার্কের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে তান্ডব চালায়। বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা।
হামলার সময় পার্কের দায়িত্বরত ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রাণের ভয়ে পার্কের জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। গত ৫ আগস্ট সোমবার বিকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরপর ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হামলা, ভাংচুর ও তান্ডবের ঘটনা ঘটে।
পার্কের সরকারি সম্পদ ধংসের ঘটনায় ১৬ আগষ্ট শুক্রবার চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রুজু করেছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনার পর বৃহস্পতিবার পার্কের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী।
পরিদর্শন পরবর্তী সাফারি পার্কের হামলা তাণ্ডবের ঘটনাটি তিনি ইতোমধ্যে বনপ্রশাসন ও সরকারের উচ্চ মহলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি আমরা ঘটনাটি চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), চকরিয়া থানার ওসিকে জানিয়েছি।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট বিকাল আনুমানিক চারটার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ কতিপয় দূর্বৃত্ত অতর্কিত ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হামলে পড়ে। প্রথমে তাঁরা পার্কের বাইরে থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পরে তাঁরা ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে পার্কের বাইরে সদ্য নির্মিত কেন্টিনের দরজা জানালার সব কাচ, ভেতরের ডেকোরেশন, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। সেখান থেকে লুটে নিয়ে গেছে সদ্য লাগানো দুইটি এসি।
এরপর হামলাকারীরা একে একে সবাই পার্কের সামনের সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে হামলা তান্ডব ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁরা পার্কের প্রশাসনিক ভবনের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকের অফিসকক্ষ এবং সম্মেলনকক্ষে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে চেয়ার টেবিলসহ দামি সব আসবাবপত্র ও দরজা জানালা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অফিসের কম্পিউটার, সেখানে রক্ষিত পার্কের সিসিটিভি। উপড়ে ফেলা হয়েছে প্রশাসনিক ভবনের বৈদ্যুতিক অবকাঠামো। হামলার সময় রেঞ্জ কমর্কর্তার অফিস লাগোয়া স্টোররুম থেকে লুটে নিয়ে গেছে পার্কের উন্নয়ন কাজের জন্য মজুত করা অন্তত ১০ লাখ টাকার নতুন বৈদ্যুতিক মালামাল। এ হামলা চলে ১২ আগষ্ট পর্যন্ত।
সাফারি পার্কের স্টাফরা জানিয়েছেন, হামলার সময় অফিসের তিনটি মোটর সাইকেল ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের অবকাঠামো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে তছনছ করা হয়েছে পার্কের ভেতরের দুইটি ডাক বাংলোর বিভিন্ন অবকাঠামো। হামলা তান্ডবের সময় পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর ছিল তা আঁচ করতে পেরে পার্কে দায়িত্বরত ৫৬ জন বনকর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেঞ্জ অফিসার মাজহারুল ইসলাম। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে তারা সবকিছু দেখে শুনে থানায় জিডি করতে আসেন।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নারকীয় হামলা তান্ডবের এ ঘটনায় পার্কের দেড় কোটি টাকার বেশি সরকারি সম্পদ ধংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্থাপনা নতুন করে তৈরি করতে দীর্ঘদিন সময় লাগতে পারে।
ইতোমধ্যে সাফারি পার্কে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার লে: কর্ণেল গোলাম কিবরিয়া খন্দকার। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, সরেজমিনে সাফারি পার্কে গিয়ে ভাংচুর ও তান্ডবের চিত্র দেখবো,তারপর এব্যাপারে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার শুরুর দিন সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাঠানোর সুযোগ ছিলো না। এখন উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, ওজি/এইচমুন্নী