বিএনএ, বিনোদন ডেস্ক : আজ সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ অভিনেতা নায়ক রহমান এর মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
অসম্ভব জনপ্রিয় রহমান ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি, পঞ্চগড় জেলার, আটোয়ারী উপজেলার, রসেয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোঃ হাফিজ উদ্দিন। নয় ভাই বোনের মধ্যে রহমান ছিলেন চতুর্থ। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ঠাকুরগাঁও হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন তিনি। ভর্তি হন রাজশাহী সরকারী কলেজে । আই এস সি তে অকৃতকার্য হওয়ায় বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন। গৃহত্যাগী হয়ে ঢাকায় মেজভাই দেলোয়ার রহমানের কাছে আসেন। জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন এবং আই এস সি পাশ করেন।
তাঁর মামা মির্জা রকিব সাহেব হোটেল শাহবাগের রেসিডেন্সিয়াল ডিরেক্টর ছিলেন। সেই সুবাতে রিসেপশনিস্ট এর চাকুরি নেন শাহবাগ হোটেলে।
আগে থেকেই শৌখিন-স্টাইলিস্ট রহমান, হোটেলে আসা দেশী-বিদেশী অতিথিদের পোষাক-স্টাইলও অনুসরণ করতেন। রহমানই প্রথম বাঙ্গালী, যিনি ঢাকায় বেলবটম প্যান্টের প্রবর্তন করেন।
সেই সময়ে সাংবাদিক ফজলুল হক ‘আযান’ নামে একটি ছবির জন্য নতুন নায়ক খুঁজছিলেন। ফজলুল হক সাহেবের কাছে রহমানকে নিয়ে যান সাধন রায়। আযান (পরবর্তিতে যা উত্তরণ নামে মুক্তিপায়) ছবির নায়ক হিসেবে সিলেক্ট করা হয় রহমানকে।
কিন্তু এছবির শ্যুটিং বিলম্ব হওয়ায় রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অভিনয় শেখার জন্য যেতেন। এরমধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ভবন, উদ্বোধন উপলক্ষে সমানে সমান নামে একটি মঞ্চনাটকেও অভিনয় করে ফেলেন রহমান।
একদিন কোন এক আত্মীয়র বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে পরিচয় হয় তখনকার চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী এহতেশামের সাথে। কথায়-কথায় একসময় এহতেশাম ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন রহমানকে।
উৎসাহ দিয়ে বলেন, তুমি অবিকল নায়ক উত্তম কুমারের মতো দেখতে। শুরু হয় চিত্রনায়ক রহমান অধ্যায়।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে, মুক্তিপ্রাপ্ত এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় রহমান-এর। প্রথম ছবিতে তিনি খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তিতে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে- রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, তালাশ, যে নদী মরুপথে, এইতো জীবন, বাহানা, ইন্ধন, নতুন দিগন্ত, জাহাঁ বাজে সেহনাই, গোরি, প্যায়সে, অন্তরঙ্গ, কংগন চলো মান গায়ে, দোস্তি, নাদান, মিলন, চান্দা, দর্শন, উত্তরণ, জোয়ার ভাটা, মেঘের পরে মেঘ, দেবদাস, স্বর্গ নরক, বিশাল, বেপরোয়া, পাহাড়ী ফুল, টাকার অহংকার, আমার সংসার, অন্যতম।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে প্রীত না জানে রীত’ ছবির সুটিং শেষে, সিলেট থেকে ঢাকা ফেরার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় (জীপগাড়ি ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে) একটি পা হারাতে হয় নায়ক রহমানকে । এক পা হারিয়েও দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন, চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন, বাংলাদেশের উত্তম কুমারখ্যাত রহমান।
অভিনয়ের পাশাপাশি নায়ক রহমান, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর নির্মিত ছবিগুলো- মিলন, দরশন, ইন্ধন, কংগন, চলো মান গায়ে, যাহা বাজে সেহনাই, নিকাহ, ইত্যাদি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রহমান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে, পাকিস্থানের করাচীতে চলে যান । পাকিস্তানে উর্দু চলচ্চিত্র- চাহাত, দো সাথী ও লগন ছবিতে অভিনয় করেন। পরে আবার তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন নিগার পুরস্কার, দেবদাস ছবিতে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার।
ব্যক্তিজীবনে রহমান, কুমকুম (জুলেখা)-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ৫ কন্যা সন্তান। তিন মেয়ে আমেরিকা, এক মেয়ে লন্ডন প্রবাসী এবং সবার ছোট মেয়ে থাকেন ঢাকায় ।
বাংলাদেশের সিনেমার যথার্থ আধুনিক চিত্রনায়ক হিসেবে রহমান জয় করে নেন কোটি মানুষের ভালোবাসা। যে ভালোবাসা মৃত্যুতে শেষ হয় না। যে ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নায়ককুলের শিরোমনি, চিত্রনায়ক রহমান কোটি মানুষের ভালোবাসায় চিরঞ্জীব।
বিএনএ/রিপন রহমান খাঁন/এইচ.এম।