বিএনএ, ঢাকা : নিখোঁজের আট দিনের মাথায় পাওয়া গেল ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান। তার নিখোঁজের পর থেকে তার অনুসারীদের একটা অংশের অভিযোগ ছিল গণমাধ্যমে তার নিখোঁজের ঘটনাটি প্রকাশ হচ্ছে না। যদিও পরবর্তীতে প্রায় প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে তার নিখোঁজের সংবাদ নিয়ে প্রতিদিন সংবাদ হয়েছে। অবশেষে শুক্রবার দুপুর একটার দিকে ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ভাই মোহাম্মদ হানিফ জানান, আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের খোঁজ পাওয়া গেছে।
তবে কোথায় কিভাবে পাওয়া গেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি বলে জানান মোহাম্মদ হানিফ। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত কারণে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন ত্ব-হা।
জানা গেছে, আবু ত্ব–হার সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া অপর তিনজনকেও একই সময় নিজ নিজ বাড়িতে পাওয়া গেছে।
আবু ত্ব-হার ফেরা নিয়ে যা বললেন প্রত্যক্ষদর্শী
আবু ত্ব-হাকে রংপুরের শ্বশুরবাড়িতে যেতে দেখা খোকন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমি দেখলাম সে আমার বাড়ির সামনে দিয়া আসতেছে। তখন আমি কাজের মধ্যে ছিলাম। তাকে বললাম, কী ব্যাপার, আপনি এদিক থেকে যাইতেছেন? তখন তিনি বলেন, ‘চুপ কর, চুপ কর। কোনো কথা হবে না। পরে আলাপ হবে।’ এই কথা বলে তখন তিনি চলে গেলেন।”
খোকন বলেন, ‘আমি কিছু বললাম না। তখন আমি ওনার বাসায় (শ্বশুরবাড়ি) গেলাম। যাওয়ার পরে ওনার শালি বলল, এখন কোনো কথা বলবে না। কালকে ব্রিফিং হবে তখন তিনি কথা বলবেন। এই পর্যন্তই আমি ছিলাম। পরে আমি চলে আসলাম।’
রংপুর পুলিশের হেফাজতে ত্ব-হা
পরে রংপুর পুলিশ ত্ব-হাকে তাদের হেফাজতে নেয়। রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রাজিব বসুনিয়া জানান, ‘আমরা দেড়টার দিকে জানতে পারি তিনি ফিরেছেন। পরে তাকে আমরা আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছি যে, তাকে কারা নিয়েছিল বা তিনি কোথায় ছিলেন। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’
বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন আবু ত্ব-হা: ডিবি পুলিশ
শুক্রবার বিকেলের দিকে ত্ব-হার ফিরে আসা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি পুলিশ। ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান ব্যক্তিগত কারণে গাইবান্ধায় এক বন্ধুর বাড়িতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানান রংপুর মহানগর পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আবু ত্ব-হা পুলিশকে জানিয়েছেন ঘটনার দিন রাজধানীর গাবতলী থেকে স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সর্বশেষ কথা বলেন। এরপর মোবাইল বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে চলে যান গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহনীতে এক বন্ধুর বাড়িতে। এরপর থেকে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ব্যক্তিগত কারণে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। এখানে তার সঙ্গে দুই সঙ্গী ছিলেন। তারা হলেন গাড়িচালক আমির উদ্দিন ও মুহিত। অপর সঙ্গী মুজাহিদকে বগুড়ায় রেখে যান। এক সঙ্গীকে নিয়ে অপরজনকে বন্ধুর বাড়িতে রেখে শুক্রবার বিকালে রংপুর মহানগরীর মাস্টার পাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন আবু ত্ব-হা। তার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কোনও গোষ্ঠী কিংবা কেউ জড়িত ছিলেন না বলে আমরা ধারণা করছি।’
উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে দেশ কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী অথবা ষড়যন্ত্রমূলক কোনও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
ত্ব-হার পরিচয় :
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রকৃত নাম আফছানুল আদনান। বয়স ৩১। তার মা আজেদা বেগম। বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। ছোট বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম। ত্ব-হা-র প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রীপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন৷ ঢাকার পল্লবীর লালমাটিয়া এলাকার এক বাসায় থাকেন ত্ব-হার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার৷ ওই বাসার নীচতলার দুটি ফ্ল্যাটে একটি বালিকা মাদ্রাসা রয়েছে, আবু ত্ব-হা যার মূল উদ্যোক্তা৷
ত্ব-হা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এক সময় তিনি আহলে হাদিস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও লাইফ ফাউন্ডেশন, আলোর পথ এবং একাডেমিক কোরআন স্টাডিজ নামে সংগঠনে জড়িত রয়েছেন। ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। রপুরের এক সময়কার ক্রিকেট খেলোয়াড় ত্ব-হা স্নাতকোত্তর করে বাড়ির পাশে আল জামেয়া আসসালাফিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনি ধর্মীয় বক্তা হিসেবেও পরিচিত; ফেসবুকে তার পেইজের অনুসারীর সংখ্যা ৫২ হাজার৷
ত্ব-হার খোঁজে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম :
ত্ব-হাসহ চারজনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। আদনান ইউটিউবে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন, এমন ভিডিও শেয়ার করেছেন অনেকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধনের খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি লিখেন তার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। গত ১৬ জুন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবু ত্ব-হার খোঁজ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আকুতি জানান সাবিকুন্নাহার।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুন দিবাগত রাত থেকে কোনো খোঁজ মিলছিল না আবু ত্বহা, তার দুই সঙ্গী আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনের।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।