28 C
আবহাওয়া
৫:২২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩৬ (বগুড়া-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩৬ (বগুড়া-১)

বগুড়া-১

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম।আজ থাকছে বগুড়া-১ আসনের হালচাল।

বগুড়া-১ আসন

বগুড়া-১ সংসদীয় আসনটি সারিয়াকান্দি এবং সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩৬ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বগুড়া-১ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ১ শত ৯৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৬ শত ৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর মোঃ শাহাবুদ্দিন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৫শত ২১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপি প্রার্থী ডাক্তার হাবিবুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। নির্বাচন পন্ড হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেই। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ডাক্তার হাবিবুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ২ শত ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩ শত ৯৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ৫শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৮ শত ৮৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কাজী রফিকুল ইসলাম বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩ শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির কাজী রফিকুল ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২০ হাজার ৩ শত ৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৬ শত ২২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪ শত ২৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৯ শত ৮১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ শোকরানা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ৯ শত ৬০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ১ শত ৫ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির কাজী রফিকুল ইসলাম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা, কলারছড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তবিবর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শত ৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কাজী রফিকুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৬ হাজার ৬ শত ১৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারিয়াকান্দি এবং সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ এর সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক, ঢাকাস্থ বগুড়া সমিতির সভাপতি ও শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর মুখোশ ছবি প্রকল্পের সদস্য সচিব কে এম মোস্তাফিজার রহমান শ্যামল, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সুরুজের পুত্র মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সদস্য আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির এবং জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সারিয়াকান্দি উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোকছেদুল আলম।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমিনুল ইসলাম হিরু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা, নিজ নিজ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর বগুড়া জেলা শাখার সাবেক আমির অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বগুড়া-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বগুড়া-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫২.০৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১২.৭৯%, বিএনপি ৪৬.৩৪ %, জাতীয় পার্টি ৪.৬০%, জামায়াত ইসলামী ১৫.৯২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২০.৩৫% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.০৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪.৫২ %, বিএনপি ৬৩.২২ %, জাতীয় পার্টি ৩.০৪%, জামায়াতে ইসলামী ৮.৮৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৫৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬১.১১%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.৪৭ %, জাতীয় পার্টি ০.৫৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৪% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৩৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৪২.৯০%, ৪ দলীয় জোট ৪৭.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৯.১৯% ভোট পায়।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বগুড়া-১ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সমানে সমান। দুই রাজনৈতিক দলে রয়েছে অন্ত:কোন্দল। জাতীয় পার্টি ও অন্যন্য দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা ভালো নয়। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ধর্মভিত্তিক রাজৈনিতক দল জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। স্বতন্ত্রপ্রাথী হিসাবে দলটি প্রার্থীতা ঘোষণা না করলে লাভবান হবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৩৬ নম্বর বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে ।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ