বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাসে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের প্রতিষ্ঠান সেপকো ও এইচটিজির যৌথ উদ্যোগে চুক্তি সই হয়।
চুক্তি সইকালে ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য গন্ডামারা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমি কেনা হয়েছে। এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা থাকবে এস আলম গ্রুপের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের অপর প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল।
শুরুতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শনির কবলে পরে! ভূমি অধিগ্রহণ, আমলাতান্ত্রিক নানা জঠিলতা, স্থানীয় লোকজনের বিভিন্ন দাবিতে এটির কর্মকান্ড পিছিয়ে যেতে থাকে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে সেখানকার পরিবেশ দুষণ হবে এমন-শঙ্কায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল স্থানীয়দের একটি পক্ষ। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ওই সময় সেখানে বসতভিটা রক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠনের জন্ম হয়। ওই সংগঠনের আহ্বায়ক হন স্থানীয় গন্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে স্থানীয় গ্রামবাসিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৪জন। আহত হয় অন্তত: ২০ জন। লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত সাড়ে তিন হাজার লোককে আসামি করা হয়। সেই সময়ের প্রধান আসামি লিয়াকত আলী এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকাদার!
অভিযোগ আছে, এলাকার মানুষকে আন্দোলনে উসকে দিয়ে নিজে এস আলম গ্রুপ থেকে ফায়দা হাসিল করেছেন লিয়াকত আলী। পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ঠিকাদারি কাজ দেয়ার পরিপেক্ষিতে আর কোনো আন্দোলন হয়নি। দ্রুতগতিতে চলছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। স্থানীয় বেশ কিছু শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পায়। এদের অধিকাংশই মুসলিম। তারা এ বছর রমজানে বিরতিহীনভাবে ৮ ঘন্টা কাজ করার পর ছুটি, জুমার নাম নামাজ পড়ার পর আর কাজে যোগদান না করাসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। এ বিষয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক চলাকালীন কতিপয় শ্রমিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাঙ্গচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। এতে নিহত হয় ৫ জন। আহত হয় অন্তত: ২৫ জন। এর মধ্যে ৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে।
এসআলম গ্রুপের মুখপাত্র আকিজ উদ্দিন বলেছেন, এটি পরিকল্পিত। মহল বিশেষ ফায়দা লুঠতে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাধাগ্রস্থ করতে শ্রমিকদের উস্কে দিয়েছে। কেন বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রতে বারবার পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে স্থানীয় জনগণ? কেন স্থানীয় লোকজন বলির পাঠা হচ্ছে? এ দায় কার? সব শ্রেণি, পেশার মানুষের মধ্যে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিএনএ/আমিন/ ওয়াই এইচ