বিএনএ, ডেস্ক : সহিংসতার মধ্যেই গত ৮ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায় নির্বাচনে এগিয়ে যায় পিটিআই। পাঞ্জাবে ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)এর শক্ত ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানেও এগিয়ে যায় খানের দল। ভোটের হিসাবে পাঞ্জাব মোটেই খেলনা কিছু নয়- পাকিস্তান পার্লামেন্টের মোট আসনের প্রায় ৬০ শতাংশ। মধ্যরাতের কিছু আগে থেকেই স্পষ্ট হতে শুরু করে সবচেয়ে বড় এই প্রদেশটিতেই ব্যাপকভাবে হেরে যাচ্ছে পিএমএল-এন।
তারপরই শুরু হয় ‘তেলেসমাতি কাণ্ড’। কিছুক্ষণ ফলাফল ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে থেমে থেমে ফল ঘোষণা শুরু হয়।
অস্বচ্ছতার শুরুটা এখান থেকেই। দেশটির বেশিরভাগ অংশে খানের জয়কে অস্বীকার করা হয়। যার জেরে ভোট কারচুপি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পিটিআই সমর্থকরা। প্রতিবাদের পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ফলাফলগুলোকে আদালত এবং নির্বাচন কমিশনে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।
খানকে উপড়ে ফেলার এই ভোট চুরি তুলকালামের মধ্যেই এখন জোট গঠনে ছুটছে পিএমএল-এনসহ আরও বেশ কিছু দল। মূল সারিতে রয়েছে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)
রাজনৈতিক দোলাচল ও একে অপরকে অবিশ্বাসের কারণে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার এক সপ্তাহ পরও পাকিস্তানে নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি।
এ দিকে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন জানিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলী চাট্টা পাকিস্তানের নির্বাচনে কারচুপির দায় স্বীকার করেছেন। দায় স্বীকার করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মিষ্টার চাট্টা বলেন, ‘আমি সমস্ত অন্যায়ের দায় নিচ্ছি। শুধু আমি নই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান বিচারপতিও এর সাথে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। যেসব প্রার্থীরা নির্বাচনে হেরে যাচ্ছিলেন, তাদের জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি বলেন, কারচুপি করার জন্য তার উপর ‘চাপ’ ছিল। এক পর্যায়ে তিনি আত্মহত্যার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু তারপর জনসাধারণের সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন।
লিয়াকত আলী চাট্টা আরও বলেন, ‘সমস্ত আমলাতন্ত্রের কাছে আমার অনুরোধ, এই সমস্ত রাজনীতিবিদদের সাথে অবিচার করবেন না।’
৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আসছিল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সহ বেশ কয়েকটি দল।
জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অন্তত ৮৫টি আসনে জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
দলটির কেন্দ্রীয় তথ্য সেক্রেটারি রওফ হাসান বলেছেন, দল ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ‘সবচেয়ে বড় ভোট জালিয়াতির’ কারণে দেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালকে মনে রাখা হবে।
ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে রওফ বলেন, ‘হিসাব অনুযায়ী ১৭৭টি আসন আমাদের পাওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে আমরা পেয়েছি মাত্র ৯২টি আসন। আমাদের থেকে ৮৫টি আসনই জালিয়াতি করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তার দল এ বিষয়ে সাংবিধানিক ও আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রওফ দাবি করেন, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে ভোটের সংখ্যার মধ্যেও বিশাল পার্থক্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভোট গণনা করে বিজয়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। দাবি প্রমাণের জন্য পিটিআইয়ের সেমাবিয়া তাহির নির্বাচনে কারচুপির একটি ভিডিও প্রমাণও দেখিয়েছেন।
পাকিস্তানের জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মুখে মুখে ইমরান খানের নাম। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভালোবাসায় নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন অনেক আগেই। এজন্য কারাবন্দি থেকেও হিসাবের খাতার শীর্ষে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সেনা ফন্দিও থামাতে পারেনি তার জনপ্রিয়তার পারদ।
নির্বাচনের আগেই এক প্রকার শেকল বেঁধে দেওয়া হয় খানের পায়ে।
অযোগ্য ঘোষণা দিয়ে প্রথম ধাপেই বাধা দেওয়া হয়। এরপর স্বতন্ত্রের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় তার দল পিটিআইকে। এমনকি নির্বাচনের প্রচারণার অনুমতিও দেওয়া হয়নি দলটিকে। দলীয় প্রতীক ‘ব্যাট’ও কেড়ে নেওয়া হয়। এটি ছিল ইমরান খানকে হারানোর বড় ধরনের একটি কৌশলী ফাঁদ। কারণ, দেশের বেশিরভাগ নিরক্ষর মানুষই ছবি বা প্রতীক দেখে ভোট দেয়।
খান বর্তমানে ইসলামাবাদের আদিয়ালা কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে পড়েন খান। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর খানের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে। যার প্রমাণ মেলে এবারের নির্বাচনে। পাকিস্তানে এমন জনপ্রিয়তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী