বিএনএ, ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যু হয় যেসব রোগে তার প্রথম তিনটির একটি হলো ক্যান্সার। বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১২ লাখ। প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় দেড় লাখ। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সারের প্রকোপ দেখা যায়। বাংলাদেশে পুরুষের মধ্যে ফুসফুস, প্রোস্টেট, মুখগহ্বর, কলোরেক্টাল, পাকস্থলী, লিভার ক্যান্সারের হার বেশি। নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখ, স্তন, মুখগহ্বর, থাইরয়েডের ক্যান্সার বেশি।
আর এই ক্যান্সারের উৎস পানি। বাংলাদেশিরা যে পানি পান করছেন তার প্রায় অর্ধেক পানিতে বিপজ্জনকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে। পিএলওএস ওয়ান নামের জার্নালে ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৯ শতাংশ পানিতে বিপদজনক মাত্রায় ক্যান্সারের জীবাণু রয়েছে। প্রতিদিন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ পানির সঙ্গে পান করছেন ক্যান্সার জীবাণু।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সংকটকে তুলে ধরে এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, নিয়মিত প্রবল বন্যা এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু সংকটের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মৌসুমী বন্যার কারণে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ে৷ সমুদ্রের নোনা পানি মিষ্টি পানির সাথে মিশে গেলে পলি থেকে আর্সেনিক নির্গত হয়।
২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে দেশের এক-তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষার তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের গড়ে ২১ শতাংশ অঞ্চল বন্যা প্লাবিত হয়।
গবেষকরা আর্সেনিক নিঃসরণের পেছনের গতিশীলতা বোঝার জন্য অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করার জন্য সারা বাংলাদেশে কূপ থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত পানীয় জলের নিরাপদ সীমা প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব ওই সীমার বেশি। কিছু নমুনায় আর্সেনিকের ঘনত্ব রেকর্ড করা হয়েছে প্রতি লিটারে প্রায় ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মাত্রার ৪৫ গুণ।
গবেষক, লেখক এবং নরউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেথ ফ্রিসবি বলেন, এই সংক্রমণ বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও দেখা গেছে।
অনুসন্ধানের প্রতিক্রিয়ায় দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফের দারিদ্র্য নিরসনের জ্যেষ্ঠ্য নীতি উপদেষ্টা জেমি উইলিয়ামস বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই মৎস্য এলাকায় কীটনাশক প্রয়োগ করে দূষণের কারণে পানির সংকটে ভুগছে।
জনসংখ্যার ঘনত্ব, হিমালয় পর্বত ও এর পাদদেশের প্রধান নদীগুলো দ্বারা অধ্যুষিত সীমিত নিম্নভূমিতে সৃষ্ট নালাগুলো বাংলাদেশের জলবায়ুকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। অনেক মানুষ ভূমিহীন এবং বন্যাপ্রবণ জমিতে বসবাস ও চাষাবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে। পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।’
গবেষকরা ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে জল পরিশোধন প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো নির্মাণসহ সম্ভাব্য সমাধানগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/ হাসনা
