বিএনএ, ঢাকা: গত ১৫ ডিসেম্বর বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এর পরদিন ১৬ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রথম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। তবে তিনি ‘যদি’ শব্দের ওপর বেশ জোর দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও পাওয়া যাবে। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনী ট্রেন চলার কথা বললেও কোন নির্বাচনী ট্রেন আগে হবে, সেটি খোলসা করেননি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন হওয়ার দাবি জানিয়েছে কোনো কোনো মহল। পাশাপাশি নতুন দল গঠনের তোড়জোড় চলছে। রহস্যটা এখানেই!
সোমবারের ভাষণে প্রধান উপদেস্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখের কথা উল্লেখ করলেও তাতে কথার মারপ্যাচ রয়েছে। তিনি এক মাস আগের ভাষণে ‘নির্বাচনী ট্রেন’ থামবে না বললেও এখন তা ‘যদি’ ‘কিন্তু’ স্টেশনে এই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ট্রেন থামাতে হচ্ছে। তার কারণও বলেছেন‘গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছে, তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদের সে অধিকার ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।
ভোটারদের ভোট দেওয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারি যে স্থানীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে সব কেন্দ্রে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস করতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, নতুন ভোটার ছাড়াও যাঁদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল, তাঁরা ভোটার তালিকায় আছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বের করে দিতে হবে।
বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় খুশি হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে, বিএনপির মহাসচিব মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপন করছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজটি কঠিন না হলেও নির্বাচনসহ অন্যান্য সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা খুবই দুরূহ কাজ হবে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রচণ্ড বিরোধ আছে।
আনুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও বাম দলগুলোর আগ্রহ থাকলেও বিএনপি প্রবলভাবে বিরোধিতা করছে। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির বিষয়েও বাম দলগুলো মোটামুটি সহমত প্রকাশ করছে; কিন্তু বিরোধিতা আসছে ইসলামি দলগুলোর কাছ থেকে। দ্বিকক্ষ বা এক কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট হবে, সে বিষয়েও সব দলের মধ্যে মতৈক্য নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন সরকার, কেবল একটি নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তাদের দায়িত্ব শেষ করতে চায় না; তারা জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রক্রিয়াতেও নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, জাতিকে কতটা ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বিএনএনিউজ/ সাকিব/ বিএম