কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) ১৬ ডিসেম্বর:
যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদ্যাপন করা হয়েছে। আজ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসান। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্ট-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বীর শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর, বীর শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এসময় রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করে শুনানো হয়। এছাড়া, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ওপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আধার পেরিয়ে’ প্রদর্শন করা হয়।
হাইকমিশনার তাঁর বক্তৃতায় শুরুতে ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বীর যোদ্ধাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ও আদর্শের পরিপূর্ণ রূপ দিতেই ‘২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান। ‘৭১ ও ‘২৪ এর শহিদ ও যোদ্ধাদের আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিবর্তনমূলক সংস্কার আনার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হাইকমিশনার প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৈধ পথে টাকা পাঠালে দেশ ও জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রবাসীবান্ধব এ সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বহুমাত্রিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের কাঙ্ক্ষিতসেবা যেমন পাসপোর্ট-ভিসা, কনস্যুলার সেবা, কর্মসংস্থানসহ কল্যাণমূলক সকল প্রকার সেবা প্রদানে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ম্যানিলা (ফিলিপাইন) :
যথাযোগ্য মর্যাদায় ও আনন্দমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস- ২০২৪ উদ্যাপন করেছে ম্যানিলাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। বিজয়ের ৫৩ বছর উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে এক মনোরম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আজ সকালে বাংলাদেশ ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। অতঃপর দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয়। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন শুরুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহিদকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি জুলাই-আগস্ট-২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে নিহত সকল শহিদ, আন্দোলনে লড়াই করে আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যেভাবে বাঙালি জাতি নিজেদের অধিকার অর্জনের জন্য শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আর ২০২৪ সালে ঠিক একইভাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম সকল বৈষম্যকে চিরতরে বিলীন করার জন্য আরো একবার রাস্তায় নেমেছিল। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রমের তিনি প্রশংসা করেন। এরপর ফিলিপিনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে একটি মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি হয়।
রিয়াদ (সৌদিআরব)
বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বিনির্মাণ ও দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ।
বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রেখে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য সম্মান বৃদ্ধি ও বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য আহবান জানিয়েছেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ। পাশাপাশি তিনি প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশ ও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার অনুরোধ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও নির্যাতিত দুই লক্ষাধিক মা-বোনদের এবং জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ
ছাত্র-জনতাদের। চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ আরো বলেন, একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হলে নিজেদের মধ্যে একতার কোনো বিকল্প নাই। তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে একতা ছিলো বলেই ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালি অস্ত্রে-শস্ত্রে সুসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশ স্বাধীন করেছিল। একইভাবে, ছাত্র-জনতার একতা ২০২৪ এ আবার আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ আরেকবার আস্বাদন করিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই একতাই আমাদের দেশি-বিদেশি যে কোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তিনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য আমাদের দেশের তরুণদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে সম্মানের সাথে টিকে থাকার জন্য প্রশিক্ষিত জনশক্তি সৌদি আরবের শ্রম বাজারে নিয়ে আসতে হবে। আগামী দিনে সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সৌদি আরবে বসবাসরত নতুন প্রজন্মকে দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা ও এর ইতিহাস সম্পর্কে জানার অনুরোধ জানান।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ডিসেম্বর সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ ও রিয়াদস্থ প্রবাসী বাংলাদেশিরাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর দূতাবাসে স্থাপিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয় এবং একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ইস্তাম্বুলে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত
ইস্তাম্বুল (তুরস্ক), ১৬ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ইস্তাম্বুল-এ যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস ২০২৪’ পালিত হয়েছে। কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তা-কমচারী এবং ইস্তাম্বুলে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সাথে ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল মোঃ ইউসুফ আলী সকলের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করে শোনানো হয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আধার পেরিয়ে’ প্রদর্শন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যগণ বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নেন।
ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল মোঃ ইউসুফ আলী শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে ও জাতির মুক্তির অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণে সকলকে আহ্বান জানান।
বিএনএ, এসজিএন