১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রাজপথে এইভাবে আঙ্গুল উচিয়ে পাকিস্থানী শাসকদের বিরুদ্ধে ভাষণ দিয়ে পুরো বাঙ্গালী জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এসেছিল এক ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমিতে।
রাজনীতি বিজ্ঞানীদের মতে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান একটা গেরিলা মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন।বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণই ছিল অঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা। সেই দিনই হাজারো মানুষ স্বাধীনতার শ্লোগান ধরে।
হ্যামিলনের বাঁশির সুরের মতো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশে সব শ্রেণির মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ রাতে তার ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চলাইট’এর অংশ হিসাবে পিলখানা, ইপিআর হেড কোয়ার্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সারা ঢাকা শহরে আক্রমণ চালায়।
অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকা জানিয়েছিল, শুধুমাত্র ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে বাঙ্গালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত হানি করে।
তবুও বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বীর বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতি ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। যা আজকের বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ-এ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ শাসনের দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাস ৮দিন পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসসহ আট জাতীয় দিবস বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৬ অক্টোবর এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে তথ্যগুলো।
একই দিন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে ৭ মার্চকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৭ মার্চ গুরুত্বপূর্ণ, তবে জাতীয় দিবস হওয়ার মতো না। আওয়ামী লীগ অনেক দিবসকে নষ্ট করে ফেলেছে।’ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান অবশ্যই জাতির জনক না।’
৫ আগস্টকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জাতীয় দিবস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব হিসেবে কোনো কোনো দিবস প্রতিষ্ঠিত করা হতে পারে। আপাতত ৫ আগস্টকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জাতীয় দিবস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
৭ মার্চকে জাতীয় দিবস থেকে বাদ দেওয়ার অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। এই ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, গায়িকা ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।
শাওন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস হিসেবে বাতিল করা হলো আজ! আমি মেহের আফরোজ শাওন বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করলাম। কিছুদিন পর দেখা যাবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস বাদ, নতুন স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ৩৬ শে জুলাই পালিত হবে হয়তো!’
শাওন আরও লিখেছেন, ‘৭ই মার্চের পক্ষে বলার জন্য যদি আমাকে ‘দালাল’ উপাধি পেতে হয় তবে আমি দালাল। আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দালাল, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দালাল।’
শুধু মেহের আফরোজ শাওন নয়, এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, কাজী নওশাবা আহমেদ, নূনা আফরোজসহ অনেকেই।
বিএনএ,শামীমা চৌধুরী শাম্মী /এইচমুন্নী