বিএনএ কুষ্টিয়া: ‘যদি ত্বরিতে বাসনা থাকে, ধররে মন সাধুর সঙ্গ’। আখড়াবাড়িতে লালন মাজারের কাছাকাছি এগোতেই ভেসে এল এ গান। শুরু হয়েছে সাধুর সঙ্গ। মনের বাসনা পূরণ ও লালন প্রেমের টানে এরই মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠেছে সাঁইজির বারামখানা।
বাউলসম্রাট ফকির লালন সাঁইজির ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে বসেছে ভবের হাট। তিন দিনের আয়োজন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে আজ সন্ধ্যায়। তবে তার আগেই চলে এসেছেন সাধু-বাউল-ভক্তরা। লালনের গানে গানে প্রচার করছেন তার দর্শন। গুরু-শিষ্যর মিলনের এই ক্ষণ যত দীর্ঘ করা যায়, ততই প্রাণে শান্তির পরশ লাগে। তাই অনুষ্ঠান শুরুর আগেই এই চলে আসা। কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন সাঁইজির আখড়াবাড়ি।
সোমবার (১৭ অক্টোবর)থেকে এখানে অনুষ্ঠান চলবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পয়লা কার্তিক লালন সাঁইজির দেহত্যাগের পর থেকেই এভাবে অনুষ্ঠান চলে আসছে।লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম হক বলেন, ফকির লালন জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় সাধু-ফকিরদের একত্রিত করে উৎসব করতেন। দিনরাত গান আর গুরু-শিষ্যের পরম্পরা চলত। ২০০ বছরের সেই রেওয়াজ এখনো আছে। এর সঙ্গে ১৩২ বছর ধরে তিরোধান দিবস পালিত হচ্ছে। এটিও একই আদলে। এসব আয়োজনে কোনো দাওয়াতের দরকার হয় না, দিনক্ষণ ঠিক রেখে আগেই সাঁইজির বারামখানায় চলে আসেন দেশ-বিদেশের সাধু-বাউল-ভক্তরা। বছরে দুটি বড় উৎসবের মাধ্যমে লালনের অসাম্প্রদায়িক দর্শন বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
কুদ্দুস ফকির বলেন, সেই ১০০ বছর আগে লালন গেয়েছেন, ‘জাত গেল জাত গেল বলে, একি আজব কারখানা,’ ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে। লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে।’ তাই লালনের দর্শন অনুসরণ করলে দেশে দেশে যুদ্ধ, হানাহানি, হিংসা-দ্বেষ, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কমে আসবে।
সোহেলী বলেন, ‘অন্য সময় পাগল পাগল ঘুরি। সাঁইজির এখানে আসলে মন শান্ত হয়ে যায়। শীতল লাগে।’
লালন আখড়াবাড়ির ভেতর ও বাইরে কালীগঙ্গা নদীপারের বিশাল মাঠে আসন গেড়ে বসেছেন সাধু-ফকিররা। চলছে গানে গানে লালনের জাতপাতহীন, মানবতাবাদী, অহিংস দর্শনের প্রচার।
হৃদয় শাহ বলেন, ‘পাশে বাড়ি হওয়ায় প্রতিদিনই আসি। তিরোধান হিসেবে আজ বিছানা করলাম। সব সাধু-ফকিরের সঙ্গে মন খুলে কথা হবে। ভাবের আদান-প্রদান হবে- এটাই চাওয়া।’
লালন মাজারের ভারপ্রাপ্ত খাদেম রিপন শাহ বলেন, ‘এবার পয়লা কার্তিক সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হবে। এ সময় সাধু-ফকিরদের খাবার দেয়া হবে। পরদিন দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। তিনি বলেন, এবার লোক সমাগম বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে।’
এই ভবের হাটে বসেছে লালন মেলাও। একতারাসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আসছেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরাও। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে আলোচনা ও লালন সংগীতের আয়োজন থাকছে।
এদিকে লালন অনুসারী ও পর্যটকদের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার খাইরুল আলম।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ