বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগে বাড়ি দখলের চেষ্টা ও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদার (৪২) ও এসআই মো. জাকিরসহ (৪০) তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামী হলেন আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী (৪২)।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
শামীমা ওয়াহেদ (৪৮) নামে এক নারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তিনি নগরীর পাঁচলাইশ থানার জাংগালপাড়া এলাকার মৃত ওয়াহেদ আজগর চৌধুরীর স্ত্রী।
বাদীর আইনজীবী আফরোজা আক্তার বলেন, মামলাটি ক্রিমিনাল মামলা হিসেবে আদালত গ্রহণ করেছেন। তবে আদালত পরে আদেশ দেবেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার জাংগাল পাড়া, রিজিয়া ম্যানশন এলাকায় শামিমার স্বামী ওয়াহেদ আজগর চৌধুরী ২০১২ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে মামলার ১নং আসামী আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী (৪২) অভিযোগকারী ও তার দুই নাবালক সন্তানকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। অভিযোগকারী ও তার দুই নাবালক সন্তানকে মরহুম ওয়াহেদ আজগর চৌধুরীর রেখে যাওয়া সহায়-সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে ১নং আসামী সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এর ধারাবাহিকতায় ২নং আসামী পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদার (৪২) ৩নং আসামী এসআই মো. জাকিরের সাথে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অভিযোগকারী ও ১নং সাক্ষী সাজ্জাদুল ইসলাম ও ২নং সাক্ষী রাশেদুল ইসলামকে গত ২৭ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে পাঁচলাইশ থানায় ২নং আসামীর অফিস রুমে ডেকে নিয়ে গালি দিয়ে হুমকী দেয় যে, যদি এক সপ্তাহের মধ্যে রিজিয়া ম্যানশন ছেড়ে দেওয়া না হয় তাহলে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। অভিযোগকারী বারবার ২নং আসামীকে রিজিয়া ম্যানশন নিয়ে দেওয়ানী আদালতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ আছে উল্লেখ করে কাগজপত্র দেখালে ২ ও ৩নং আসামী বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার আদেশ তারা তোয়াক্কা করে না।
এছাড়া ১২ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ২নং আসামীর নির্দেশে ১ ও ৩নং আসামী অজ্ঞাত ৫/৬জন সন্ত্রাসী হকিস্টিক, লাঠি, রাম দা দিয়ে রিজিয়া ম্যানশনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে অভিযোগকারী ও ১নং স্বাক্ষীর ফ্ল্যাটে গিয়ে অভিযোগকারী ও তার ভাই ১নং স্বাক্ষীকে তাৎক্ষনিক বের হওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করেন। তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে ১নং স্বাক্ষীকে রশি দিয়ে হাত পা বেধে ফেলে। হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। ফলে গায়ে ফুলা ও জখম সৃষ্টি হয়। ১নং আসামী ১নং স্বাক্ষীকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে তখন অভিযোগকারী তার ভাইকে ছাড়াতে গেলে ৩নং আসামী সাথে সাথে অস্ত্র বের করে মাথায় ঠেকিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে অভিযোগকারীকে আটকে রাখে। এমন অবস্থায় অভিযোগকারী ও ১নং স্বাক্ষী আসামীদের নিকট প্রাণ ভিক্ষা চাইলে ১ ও ৩নং আসামী তাদের বলে যে, ২নং আসামীর নির্দেশ আছে যে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আসামীদের দিতে হবে। চাঁদা না দিলে সন্ত্রাসীদের দিয়ে পিটিয়ে রিজিয়া ম্যানশন থেকে বের করে দিবেন এবং ২নং আসামীর ক্ষমতাবলে অভিযোগকারী ও তার নাবালক ছেলেমেয়েকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাজতে রাখবেন।
সর্বশেষ ১৬ আগস্ট ২নং আসামীর নির্দেশে ১ ও ৩নং আসামীসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬জন সন্ত্রাসী, পাঁচলাইশ থানার ৭/৮ জন পুলিশ কনস্টেবলসহ রিজিয়া ম্যানশনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে ১নং সাক্ষীর ওপর ১নং আসামী ও অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাকে কিল ঘুষি মেরে তার বাসস্থান থেকে বের করে দিতে চাইলে তার চিৎকারে আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে বাধা দিলে ১নং সাক্ষীকে মারধর করা থেকে নিবৃত্ত হয়। এসময় উক্ত ভবনের ভাড়াটিয়া স্বপ্নাকে ১নং আসামী লাথি মেরে ফেলে দেয়। অভিযোগকারী উপস্থিত পুলিশের সহযোগিতা চাইলে ৩নং আসামীর নির্দেশে ও নেতৃত্বে পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ২নং আসামীর নির্দেশে ১নং আসামী বিকেল ৫টার দিকে এক দৈত্যকার বিদেশী কুকুর নিয়ে উক্ত ভবনের বাসিন্দানের মনে ভীতির সঞ্চার করে।
বিএনএনিউজ/বিএম