বিএনএ, বশেমুরবিপ্রবি : গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার(১৭ আগস্ট) দুপুর ১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ রহমান বলেন,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম অবকাঠামোগত সংকটের মাঝে একাডেমিক ভবনের জন্য বরাদ্দকৃত একটি জায়গায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ করার কোনোভাবেই যৌক্তিকতা নেই। যদি এখানে হাইটেক পার্ক নির্মাণ হয় তাহলে বহিরাগতের আনাগোনা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ব্যাহত হবে।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বারবার হামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু এর কোনো ঘটনারই সুষ্ঠ বিচার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হাইটেক পার্ক নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আরও বেশি হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই হাইটেক পার্ক এমন কোনো স্থানে নির্মাণ হোক যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন পরাণ বলেন, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের সমর্থন ছাড়াই এ ধরনের প্রজেক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসার জন্য মাননীয় উপাচার্যকে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই আইটি পার্ক নির্মাণ হোক কিন্তু সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে নির্মাণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান কে ধ্বংস করে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম আমরা মেনে নিবো না।’
এছাড়া, মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য ১০ দিনের সময়সীমা প্রদান করেন, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ’হাইটেক পার্ককে কেন্দ্র করে বারবার প্রধানমন্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে। অথচ মাত্র ছয়মাস আগে হামলার শিকার হয়ে আমরা যখন বারবার প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হওয়ার কথা বললাম তখন কেনো আমাদের প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী অবধি গেলেন না? যেই মাস্টারপ্লান উপেক্ষা করে এই হাইটেক পার্ক নির্মাণ হচ্ছে সেই মাস্টারপ্লান ও তো প্রধানমন্ত্রী কর্তক অনুমোদিত। আমাদের প্রশাসন কি প্রধানমন্ত্রীকে একবারও জানিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কতটা দূরাবস্থা? চলমান কাজ চালিয়ে নেয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। ছয় বছর ধরে চলমান প্রজেক্টকে শুধুমাত্র চালিয়ে নেয়া ছাড়া বিগত দুই বছরে ল্যাব সংকট, আবাসন সংকট আর ক্লাসরুম সংকট দূর করতে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাইটেক পার্কের বিপক্ষে নই, কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে, ৫৫ একরের প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত মাস্টার প্লান অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে আমরা দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের স্থানে হাইটেক পার্ক চাই না, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করে একপাশে হাইটেক পার্ককে জায়গা দিক। সবশেষে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই আগামী দশদিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে বাতিল করতে হবে এবং এইসময়ে হাইটেক পার্কের কাজ বন্ধ থাকবে। আর যদি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নেয়া হয় তবে শিক্ষার্থীরা বরাদ্দকৃত জায়গা দখলমুক্ত করাসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।’
হাইটেক পার্কের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘ প্রাইম মিনিস্টার যেটা দিয়েছে এটার জন্য কারা কারা নিন্দা জানিয়েছে সেটা তার জানার দরকার আছে। এটার ব্যাপারে আমি একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। সব কিছু রিভিউ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবারো পাঠানো হবে।’
বিএনএ/ মুহা. ফাহীসুল হক ফয়সাল, ওজি