24 C
আবহাওয়া
৯:১৪ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩৫ (জয়পুরহাট-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩৫ (জয়পুরহাট-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে জয়পুরহাট-২ আসনের হালচাল।

জয়পুরহাট-২ আসন 

জয়পুরহাট-২ সংসদীয় আসনটি আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল এবং কালাই উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩৫ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে জয়পুরহাট-২ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৮ হাজার ২শত ৮২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৬ শত ৯২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৭১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। নির্বাচন পন্ড হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেই। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় । এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান নির্বাচিত

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ১ শত ৮৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪শত ৫৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৮ শত ৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মীর জালালুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ২ শত ৬৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান পুনরায় বিজয়ী 

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ১ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ১ শত ১২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৩ হাজার ২ শত ৯০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মীর খলিলুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৫ শত ৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গোলাম মোস্তফা বিজয়ী 

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ২ শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ১ শত ৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির গোলাম মোস্তফা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৮ শত ৮০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৩ হাজার ৭ শত ২১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭ হাজার ২ শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬শত ৮৩ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির কাজী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শাহ জামান তালুকদার,হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল বাকী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৮ হাজার ৭ শত ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ১ শত ২০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-২ আসনে বিজয়ী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাতীয় সংসদের হুইপ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এবারও মনোনয়ন চাইবেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা। তালিকায় আছেন সাবেক এমপি খলিলুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন। বিএনপির নেতা রওনকুল ইসলাম টিপু চৌধুরী, কামরুজ্জামান কমল ওঅধ্যক্ষ আলী হাসান মুক্তা।
জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য কাজী আবুল কাসেম রিপন, জয়পুরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আবু সাঈদ নুরুল্লাহ মাসুম। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী থেকে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন মাওলানা নুরুজ্জামান।
এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শাহ জামান তালুকদার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল বাকী দলীয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জয়পুরহাট-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি প্রার্থীরা টানা বিজয়ী হয়। শুধুমাত্র দশম, একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর জয়পুরহাট-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৪.৬৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৭.৯৬%, বিএনপি ৫০.৪৭ %, জাতীয় পার্টি ১.৯%, জামায়াত ইসলামী ১৭.৮৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮০% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৬৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪.৪৭ %, বিএনপি ৪৭.৯০ %, জাতীয় পার্টি ১৭.৯২%, জামায়াত ইসলামী ৯.২৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৩২%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.৪৭ %, জাতীয় পার্টি২.৭৪%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৭% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৮৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৪৮.৭৬%, ৪ দলীয় জোট ৫০.১২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.১২% ভোট পায়।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, জয়পুরহাট-২ আসনে সাংগঠনিক দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। এরপর রয়েছে আওয়ামী লীগ। দুই রাজনৈতিক দলে রয়েছে অন্ত:কোন্দল। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াত ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। স্বতন্ত্রপ্রাথী হিসাবে দলটি প্রার্থীতা ঘোষণা না করলে লাভবান হবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৩৫ নম্বর জয়পুরহাট-২ আসনে গনেশ উল্টেও যেতে পারে!

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ