।। বাবর মুনাফ ।।
মার্চ মাসের ১৭ তারিখ অর্থাৎ ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস। এই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। যদি ওই দিনটি বাঙালি জাতির কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন হিসেবেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ও মা সায়রা বেগমের কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। জাতীয়ভাবে দিনটিতে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কারণেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) খ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে ১৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করে। প্রথমে দিনটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করলেও পরবর্তীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের প্রথম শিশু দিবস পালন করা হয় ১৯৯৪ সালে ১৭ মার্চ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন “জাতীয় শিশু দিবস” হিসাবে পালন করে জাতীয় শিশু সংগঠন। বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা ১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর শিশু সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার জাতীয় সম্মেলনে শিক্ষাবিদ ডক্টর নীলিমা ইব্রাহিম ১৭ মার্চ এই দিবসটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তাব পেশ করেন।
আর সেই সম্মেলনে তৎকালীন নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি শিশু দিবস হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালনে ডক্টর নীলিমা ইব্রাহিমের প্রস্তাবের সমর্থন করেন। বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে ১৯৯৭ সালে ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। তবে বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা প্রথম জাতীয় শিশু দিবস উদ্বোধন করেন।
তথ্যমতে, শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বছরে একাধিকবার বিভিন্ন নামে শিশু দিবস পালন করা হয়। এর পাশাপাশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো নিজেদের মতো করে পালন করে জাতীয় শিশু দিবস। আন্তর্জাতিকভাবে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হয়।
জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে পালন হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালিত হয় ১ জুন। এছাড়া ১১ অক্টোবর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালিত হয়। শিশুদের জন্য এরকম আরও কয়েকটি দিবস রয়েছে। এর বাইরে বিশ্বের দেশগুলো তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোন দিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের জুনের দ্বিতীয় রোববার পালন করা হয় শিশু দিবস।
আবার পাকিস্তানে শিশু দিবস হল ১ জুলাই, ৪ এপ্রিল শিশু দিবস উদযাপিত হয় চিনে। অন্যদিকে ব্রিটেনে শিশু দিবস পালন করা হয় ৩০ অগাস্ট, জাপানে ৫ মে, পশ্চিম জার্মানিতে ২০ সেপ্টেম্বর। তবে সব দেশেই শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য একটাই, দেশের শিশুদের অধিকার ও তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ফের একবার সচেতনতার বার্তা দেওয়া।
ভারতে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয় ১৪ নভেম্বর। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল ও শিশুদের প্রিয় চাচা নেহেরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বরকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে ১৯৬৭ সাল থেকে পালন করে আসছে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব শিশু দিবস পালন হলেও জাতীয় শিশু দিবস ছিল না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে ওই সময়কার মন্ত্রিসভা। ১৯৯৭ সাল থেকেই দিবসটি পালন শুরু হয়। এ দিনটিকে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
১৭ মার্চকে শিশু দিবস ঘোষণার কারণ হিসেবে জানা গেছে, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। তাই তার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। অবশ্য ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারানোর পর তৎকালীন বিএনপি সরকার শিশু দিবস পালন এবং সরকারি ছুটি বাতিল করে। ফলে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দিবসটি পালিত হয়নি।
এ সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন ১৯ জানুয়ারিকে বিএনপি সরকার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে আবারও প্রতিবছর জাতীয় পর্যায় বড় আয়োজনের মাধ্যমেই এ দিবসকে পালন করে আসছে।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় এবং এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। জাতীয় শিশু দিবস অর্থাৎ ১৭ মার্চের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এই দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে থাকে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বিএনএ/ ওজি