শনিবার রাতে পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের সভায় দৈনিক ইত্তেফাক, সাপ্তাহিক ঢাকা টাইমস ও সাপ্তাহিক পূর্বাণীর মুদ্রণালয়, নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্তকরণ, সংবাদপত্রের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা, দেশরক্ষা আইনে জনাব তফাজ্জল হোসেন, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেনসহ অন্যান্য সাংবাদিক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামী সোমবার একদিন প্রতীক ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।
দি নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্তকরণের উপর স্বতন্ত্র দলের নেতা জনাব আসাদুজ্জামানের ও গণপরিষদ সদস্যের অধিকার সংক্রান্ত মুলতবি প্রস্তাব এবং বিরোধীদলের নেতা আবদুল মালেক উকিলের আনীত মুলতবি প্রস্তাব স্পিকার সাহেব কর্তৃক অগ্রাহ্য করার প্রতিবাদে বিরোধী ও স্বতন্ত্র দলীয় সদস্যরা পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন ।
বিরোধী দলের ও স্বতন্ত্র দলের সদস্যরা কালো ব্যাজ পরিধান করেন । কারণ জুলুম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হইতেছে ১৭, ১৮, ১৯ তারিখে । পূর্ব বাংলার প্রায় সমস্ত জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে । জুলুম প্রতিরোধ দিবস পালন করতে দেওয়া হবে না। নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করে, শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার উপর গুলি করে, প্রেস বন্ধ করে দিয়ে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা দিয়ে কিছু দিনের জন্য আন্দোলন বন্ধ রাখা যায়, বেশি দিন না ।
বিকাল বেলা বৃষ্টি একটু কম হলেও মাঝে মাঝে চলছে । মাজায় ব্যথা বেশি, হাঁটতেও পারলাম না । রাত কেটে গেল । রাতে ভীষণভাবে বৃষ্টি হলো । ঘুম ঠিকই হয়েছে, তবে মাঝে দু’বার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ।
২০শে জুন ১৯৬৬ ॥ সোমবার
হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার! কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলাম । আমার ফুলের বাগানের এক অংশের কিছু মাটি ধ্বসে পড়েছে। ভিতরে অনেকদূর দেখা যায় । কি ব্যাপার এখানে কি আছে? কেউ বলে ভিতরে কিছু নিশ্চয়ই হবে। কোনোদিন এই ঘটনা ঘটে নাই । মাটি ধ্বসে নিচের দিকে গিয়াছে। আমি দেখলাম জমাদার ছুটে এসেছে । চীফ হেডওয়ার্ডারকে খবর দেওয়া হয়েছে । কি করা যায়? আমি আমার মেট, পাহারা মেম্বরকে বললাম, পুরনো আমলের একটি পানির কুয়া ছিল বলে মনে হয়। জায়গাটি গোলাকার, চারদিকে ইট দিয়ে বাঁধা । অনেকেই বলল, ‘তাই হবে’। এরপর শুনলাম জেলার সাহেবকে খবর দেওয়া হয়েছে। জেলার সাহেব দেখতে আসবেন। তখন আমি হাসতে হাসতে বললাম, মনে হয় ভিতরে কিছু আছে। জেলখানার এই জায়গাটি শায়েস্তা খানের আমলে লালবাগ ফোর্টের অংশ ছিল। এখানে নবাবদের ঘোড়াশালা, হাতিশালাও ছিল। আমি যে ঘরটিতে থাকি সেটা ঘোড়া থাকার মতোই ঘর। দেখলে বোঝা যাবে এখানে ঘোড়াই রাখা হতো ।
সূত্র: কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১০৮-১০৯, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭
আরও পড়ুন :
গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী