বিএনএ ঢাকা: দেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ সকল ক্ষতিকর অনলাইন গেম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে টিকটক-ভিগোসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গেম বন্ধের নির্দেশ কেনো দেয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ আগস্ট) এ সংক্রান্ত দায়ের করা রিটের শুননানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম সরোয়ার পায়েল। আর বিটিআরসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
গত ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার।
রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (ডিজি), বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর, বিকাশ ও নগদকে বিবাদি করা হয়।
এতে বলা হয়, পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো গেমে বাংলাদেশের যুবসমাজ এবং শিশু-কিশোরেরা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মেধাহীন হয়ে পড়ছে। এসব গেম যুব সমাজকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
রিটে আরও বলা হয়, টিকটক, লাইকি অ্যাপ ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি নারীপাচারের ঘটনা এবং বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থপাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে- যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং দেশের ও জনস্বার্থের পরিপন্থি। এটা শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধেরও পরিপন্থি।
গত পয়লা জুলাই রিটের শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য কঠোর লকডাউনের পর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করেছিল হাইকোর্ট। ওই সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশের কপি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতে বলা হয়।
এর আগে ফ্রি ফায়ার ও পাবজির আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এটি বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সুপারিশ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারও আগে পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও পরে আবার চালু করা হয়েছিল।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ওই সময় জানিয়েছিল, ওই দুটি গেম কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। তাই ধীরে সুস্থে বিকল্প পদ্ধতিতে গেম দুটি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হবে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছিল, যারা এ ধরনের গেমে আসক্ত তারা ভিপিএনসহ নানা বিকল্প উপায়ে গেমটি খেলতে পারে। সেসবও বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হবে।
কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যে আসক্তি তৈরির ফলে সম্প্রতি ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়।
সাউথ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও ২০১৭ সালে চালু হয়। এরপর থেকে দ্রুত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই গেমটি। ২০১৮ সালে অ্যাঙ্গরি বার্ড, টেম্পল রান, ক্যান্ডি ক্রাশের মতো গেমগুলোকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেমের তালিকায় শীর্ষে জায়গা করে নেয় পাবজি।
দিকে, ২০১৯ সালে চীনা প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার একইভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে করোনা মহামারির ফলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে এসব গেমে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বিএনএনিউজ/আরকেসি