বিএনএ, ডেস্ক : নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ‘নৌকা’ নির্বাচনের প্রতীক তালিকায় থাকছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
স্ট্যাটাসে আসিফ বলেন, অভিশপ্ত ‘নৌকা’ মার্কাটাকে আপনারা কোন বিবেচনায় আবার শিডিউল ভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেন? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই গণঅভ্যুত্থানকে আপনারা জাস্ট বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং কাদেরকে দেওয়ার জন্য এই মার্কা রাখছেন আপনারা?
স্ট্যাটাসের শেষে তিনি বলেন, পরাজিতদের স্বপ্নের রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে তাদের মার্কা ফিরিয়ে দিতে চান? বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রশ্ন রইলো।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানের শরিক বিভিন্ন পক্ষের দাবিতে সরকার আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারির পর দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
নিবন্ধন প্রত্যাশী নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক, সংরক্ষণে না রাখার দাবি করেন। যতক্ষণ আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অন্য কোনো সিদ্ধান্ত বা আদালতের কোনো নির্দেশনা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক তালিকায় রাখা যাবে না বলে দাবি করেছে এনসিপি। পাশাপাশি নিবন্ধন পেলে দলটির জন্য প্রতীক বরাদ্দের তালিকায় শাপলা যুক্ত করার আবেদন করেছে তারা।
তার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন নিবন্ধন স্থগিত থাকলেও নৌকা প্রতীক তালিকায় বহাল থাকছে। তিনি বলেছেন, “দল বিলোপ ঘোষণা করলেও প্রতীক সংরক্ষণে রাখা হয়, প্রতীকের মালিক নির্বাচন কমিশন।” প্রতীক কখনও নিষিদ্ধ হয় না।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ আরও বলেন “নৌকা প্রতীক তো একটা পার্টির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; প্রতীক তো নির্বাচন কমিশনের। দলটির নামে যখন অ্যালটমেন্ট বা অ্যালোকেশন করা হয়েছে; দল তো বাতিল হয়নি। পার্টি তো আছে। পার্টি যদি বাতিলও হয়, প্রতীক তো বাতিল হবে না।”
নৌকা প্রতীকও নির্বাচন কমিশনের প্রতীক তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমাদের অবস্থান আইনের অবস্থান। ফ্রিডম পার্টির বোধহয় এখন অস্তিত্ব নেই; কিন্তু প্রতীক থাকবে। প্রতীকের মালিক নির্বাচন কমিশন। আমরা অ্যালট করি, দলটির নামে অ্যালট হয়ে গেলে তা ব্যবহার করবে। পার্টি ডিজলভ যদি হয়, প্রতীক ডিজলভ হবে না। এটা লজিক্যাল।”
প্রতীক সংরক্ষণে থাকে জানিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বিলোপ ঘটলেও তার প্রতীক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না, “পার্টি বিলোপ হলেও প্রতীক ইসির কাছে থাকবে; এটা আবার আরেকজনের নামে বরাদ্দ হবে। আমরা প্রতীক বাদ দেব না।” বলেন, আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহালের পর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ওই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকলেও নৌকা প্রতীক সেখানে বহাল রয়েছে। কিন্তু এনসিপি ও নাগরিক ঐক্যের চাওয়া শাপলা সেখানে রাখা হয়নি।
বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করার জন্য নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৬৯টি প্রতীক সংরক্ষিত রয়েছে। এরমধ্যে দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়া প্রতীকগুলো রয়েছে তালিকায়; এমন চারটি প্রতীক বাঘ, চাবি, কুড়াল ও হুক্কা।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিধিমালার খসড়া পাঠানো ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শেষপর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা বাতিল না করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পোস্ট দেন। এর কয়েক ঘন্টা পর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ‘নৌকা প্রতীক। এখন আওয়ামী লীগের নামের পাশে নৌকা প্রতীক দেখা যাচ্ছে না।
ইসি সচিবালয়ের সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নৌকা প্রতীকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সৈয়দ সাকিব