বিএনএ,ডেস্ক : বানিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যর দাম নির্ধারিত করে দিয়েছে। কিন্তু সেই নির্ধারিত মূল্যে কোথাও ভোক্তারা তা কিনতে পারছে না। বিক্রেতারা যার যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করে পণ্য বিক্রি করছে। ফলে দিনদিন অস্থিরতা বাড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। পণ্যের কোনো ঘাটতি না থাকলেও বেশির ভাগ পণ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী। গত রমজান থেকে এ রমজানে এক বছরের ব্যবধানে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে, যা গত বছর ছিল ৩০-৩৫ টাকা।
কাওরান বাজারে সাধারণ জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০-১১০০ টাকা কেজিতে, যা গত রমজানে ছিল ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার আলুর দাম ১০৮ শতাংশ, রসুন ৪৩ শতাংশ, আদা ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারে সব নিত্যপণ্যের দর অস্বাভাবিক, টালমাটাল। টিসিবি’র দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে বড় দানা মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৮-১১২ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১২.৮২ শতাংশ। পাশাপাশি বর্তমানে মাঝারি দানা মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১১০-১১৫ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৮.৮৯ শতাংশ।
বর্তমানে ছোলা (মানভেদে) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।
বর্তমানে আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১৬-২০ টাকা। বছরের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ১০৮.৩৩ শতাংশ।
বাজারে দেশি পিঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ২৫-৩৫ টাকা। বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৮৩.৩৩ শতাংশ। পাশাপাশি বর্তমানে আমদানি করা পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২২৮.৫৭ শতাংশ।
দেশি রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২৭.২৭ শতাংশ। পাশাপাশি বর্তমানে আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে রসুনেরর দাম বেড়েছে ৪২.৮৬ শতাংশ।
দেশি আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৬০.৬১ শতাংশ। পাশাপাশি বর্তমানে আমদানি করা আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১২০-২৮০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১২.৫০ শতাংশ।
বর্তমানে চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১১৫-১২০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২১.২৮ শতাংশ।
সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৪৫০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০-৪৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২১.৬৭ শতাংশ।
বর্তমানে গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ – ৯৯০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৭৫০-৮০০ টাকা। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়। এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৫৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ।
পাঙাশ, কই, রুই, কাতলাসহ প্রায় সব ধরনের মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। ডিমের দামও গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তি। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়।
ইফতারের অন্যতম উপকরণ খেজুরের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্মারকে বলা হয়, সাধারণ মানের খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং জাইদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলো। তবে দেশের কোথাও এ দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে না। ২২০ টাকার নিচে কোনো খেজুরই নেই বাজারে। মোটামুটি মানের খেজুর কিনতেও গুনতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
৬ টাকার লেবু ঢাকায় ২০ টাকা। বাজারভেদে প্রতি ডজন লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৪০ টাকায়। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে লেবুর দাম বেড়েছে তিনগুনেরও বেশি। তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে। যদিও দোকানদার তরমুজ কিনেন পিস হিসাবে।
ইফতারি তৈরিতে ছোলা, অ্যাংকর ডাল ও বেসন পণ্য অপরিহার্য। ছোলা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। গত বছর এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। সে হিসাবে এবার কেজিতে বেশি খরচ করতে হবে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। পিছিয়ে নেই অ্যাংকর ডাল। গত কয়েক দিনে এ ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এ ছাড়া বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।
সবকিছুর দাম বাড়লেও ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি পণ্য। টিসিবি’র দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়। আর এক বছর আগে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কমেছে ১২.২৪ শতাংশ।
খোলা আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ৫৮-৬০ টাকা। সেই হিসেবে দাম কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ।
খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৪৮-১৫৫ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ১৬৮-১৭২ টাকা। দাম কমেছে ১০.৮৮ শতাংশ। বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ৮৭০-৮৮০ টাকা। দাম কমেছে ৯.৭১ শতাংশ। যদিও বিশ্ববাজারে এখন তেলের দর অনেক কম।
বছরের অন্য সময়গুলোতে নির্দিষ্ট পণ্যের দাম উঠা-নামা করলেও বিশেষ করে রমজানে নিত্যপণ্যের দরদাম নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছরই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা আগেভাগে শুরু করে হাঁকডাক। ভোক্তাকে খুশি করতে ‘মজুত পর্যাপ্ত, বাড়বে না দাম’ এমন বক্তব্য দেন। কিন্তু কখনোই কথার সঙ্গে কাজের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীচক্রের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে। সরকার এদের নিয়ন্ত্রণ করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফলে সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ বেড়ে চলেছে। দিন দিন ফুঁসছে ভোক্তারা।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী