বিএনএ, চট্টগ্রাম অফিস: বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস-২০২১ সোমবার(১৫মার্চ) চট্টগ্রাম বিভাগে বর্ণ্যাঢ্যভাবে উদযাপিত হয়েছে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণ হতে বেলুন উড়িয়ে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “মুজিববর্ষে শপথ করি, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি”।
দিবসটির প্রতিপাদ্য এবং ভোক্তা অধিকারের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(সার্বিক), যুগ্মসচিব জনাব খন্দকার জহিরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ, ডিআইজি, মো: আনোয়ার হোসেন, বিপিএম(বার),পিপিএম(বার), উপমহাপরিচালক বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, মো: শাহবুদ্দিন, বিএএমএস, পিএএমএস, দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি মাহবুবুল আলম,কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব), চট্টগ্রাম, সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম এর উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রতিপাদ্য বিষয়ে আলোচনা করেন ড. খালেদ মিসবাহুজ্জামান, অধ্যাপক, ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন যে, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় তাঁর দপ্তর হতে সকল রকমের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সমাজে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সবার আগে প্রয়োজন সাধারণ ভোক্তা ও ব্যবসায়ীবৃন্দের সচেতনতা। সবাই সচেতন হলে খাদ্যে ভেজাল, ভোক্তা অধিকার বিরোধী অপরাধ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), যুগ্মসচিব, জনাব খন্দকার জহিরুল ইসলাম বলেন যে, আমরা কেউই নদী বা সমুদ্রে সরাসরি কোন প্লাস্টিক পণ্য ফেলিনা। আমরা এগুলি যত্রতত্র ফেলি এবং তা নদী বা সমুদ্রে গিয়ে মিশে এবং পরিবেশ দূষণ করে। আমরা সবাই এগিয়ে আসলে এই দূষণ রোধ করা সম্ভব। বাজারে বা জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের ময়লা ফেলার নির্ধারিত ঝুড়ি রাখা একান্ত প্রয়োজন। প্রথমে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা আবশ্যক অত:পর কেউ এই প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার শেষে নির্ধারিত ঝুড়িতে না ফেলে যত্রতত্র ফেললে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জনাব খন্দকার জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি সক্রিয় করার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম হতে চিঠি প্রেরণ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তেব্যে জনাব মো: আনোয়ার হোসেন, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার), ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, বলেন যে ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার আইন প্রণিত হয়। এই ভোক্তা অধিকার আইন ভোক্তাগণের সকল প্রকারের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ একটি যুগোপযোগী আইন। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকল রকমের সহায়তা করতে প্রস্তুত। ভোক্তা স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
জনাব মো: শাহবুদ্দিন, বিএএমএস, পিএএমএস, উপমহাপরিচালক বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ বলেন আমরা সবাই ভোক্তা, সুতরাং আমাদের সবাইকে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সহায়তা প্রয়োজন হলে তাঁর দপ্তর প্রস্তুত আছেন।
জনাব এসএম নাজের হোসাইন, প্রেসিডেন্ট, কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রাম তাঁর বক্তব্যে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন পণ্য মূল্য অযাচিতভাবে বাড়িয়ে দিতে না পারে বিষয়ে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
ড. খালেদ মিসবাহুজ্জামান, অধ্যাপক, ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম তাঁর বক্তব্যে প্রতিপাদ্য বিষয়ে আলেকপাত করেন। তিনি বলেন,সারাবিশ্বে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয়। উন্নত বিশ্ব এমনকি এশিয়ার অনেক দেশও ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখেন। আমাদের দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহারোত্তর যথাযথ যত্রতত্র ফেলে দেওয়া ও রিসাইকেলিং ব্যবস্থা যথাযথ না থাকায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। আমাদের নদীর তলদেশ কোথাও কোথাও দশ ফিট পর্যন্ত প্লাস্টিক পণ্যের আবরণে ঢেকে আছে।এই প্লাস্টিকজাত পণ্য নদী বা সমুদ্রে পড়ার ফলে মাছের শরীরে প্লাস্টিক বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এই মাছ মানব দেহে প্রবেশের পর মানব দেহ বড় হওয়ায়অনেক বেশিগুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সর্বস্তরের জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে।
জনাব মাহবুবুল আলম, প্রেসিডেন্ট, দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজানে কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি নিত্য পণ্য মূল্যের বৃদ্ধিতে কারসাজি করেন অথবা অনৈতিক মুনাফা লাভে চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনকে চট্টগ্রাম চেম্বার সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে মর্মে উল্লেখ করেন।
উপপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন কিছু বিষয় যেমন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যেপণ্য বিক্রয় করার কারণেঅভিযোগ তুলনামুলক কমেছে। বর্তমানে কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আসছে।তিনি আরো বলেন, তাঁর দপ্তর আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছে, ভোক্তা অধিকার বিষয়ক প্রচারণা চলছে, ভোক্তাগণের নিকট হতে প্রাপ্ত অভিযোগ আন্তরিকতার সাথে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে এবং নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।তবে ভোক্তাগণকে অনলাইন বা সরাসরি পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রেআরো সতর্ক হতে অনুরোধ করেন।
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, জনাব পাপীয়া সুলতানা লীজাপাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন এই অধিদপ্তর ভোক্তাগণের নিকট হতে অভিযোগগ্রহণে একটি হট-লাইন নম্বর চালু করেছে। হটলাইন নম্বর হচ্ছে 16121 এ ছাড়াও ৩৩৩ নম্বরে কল করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যায়।
এ আইনে প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলো আদায়কৃত জরিমানার ২৫% অভিযোগকারীকে প্রদান করা হয়। তবে তাঅভিযোগকারীর ক্ষতিপূরণ নয়, বরং প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হয়। অভিযোগকারী চাইলে ফৌজদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও তাঁর আর্থিক ক্ষতির ৫ গুণ ক্ষতিপূরণ দাবি করে দেওয়ানী প্রতিকার চাইতে পারেন।
আলোচনায় অংশনেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ১৫ আনসার ব্যাটেলিয়ানের পরিচালক এস এম আজিম উদ্দীন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি মাহফুজুল হক শাহ, রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, রাজনীতিবিদ মৃদুল চৌধুরী, বনফুল গ্রুপের জিএম আনামুল হক, কর্নফুলী বাজার সমিতির সাধারন সম্পাদক আবদুল হক, কামাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খালেদ খান চৌধুরী প্রমুখ।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন জনাব কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ সভাপতি, ক্যাব, চট্টগ্রাম।
পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগ এর উদ্যোগ্যে দিনব্যাপী ২টিট্রাক-শো’র আয়োজন করা হয়েছে। ট্রাক-শোতে ভোক্তা অধিকার আইন বিষয়কজারিগান প্রচার করা হয়েছেএবং ২টি ট্রাক হতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত লিফলেট, প্যাম্ফলেট বিতরণ করা হয়েছে এছাড়াও নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জেলা তথ্য অফিস, চট্টগ্রামের সহযোগিতায় বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০২১ উপলক্ষে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ২৪/এসজিএন