বিএনএ, চট্টগ্রাম: ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ৮শ’ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাষ্ট (সিইআইটিসি) ম্যানেজিং ট্রাস্টি প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নগরীর খুলশী থানায় রুজুকৃত মামলায় অপর তিনজনসহ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজস করে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগের পাশাপাশি ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য নানা ভুয়া সভা করে মিথ্যা রেজুলেশন তৈরিসহ নানা চলচাতুরীর আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাষ্টের (সিইআইটিসি) চেয়ারম্যান এম এ মালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রফেসর রবিউল হোসাইন সিইআইটিসির ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে ইম্পেরিয়েল হসপিটাল লিমিটেডের (আইএইচএল) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মানুযায়ী সিইআইটিসির আর্টিকেলস্ অব এসোসিয়েশন মতে কোম্পানীর বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স এর ৫১% ডাইরেক্টর্স চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাষ্ট (সিইআইটিসি) হতে মনোনীতদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকে এবং সিইআইটিসি কর্তৃক মনোনীত ডিরেক্টর উক্ত ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০১ সাল হতে গত বছরের ৩০জুন পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্ব পালনকালে নানা ধরনের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে প্রফেসর রবিউল হোসাইন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
গত ২৩ নভেম্বর চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাষ্ট (সিইআইটিসি) ট্রাস্টি বোর্ডের ৮৭তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওয়াহিদ মালেককে প্রফেসর রবিউল হোসাইনের স্থলাভিষিক্ত করে ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের (আইএইচএল) ডাইরেক্টর ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ওয়াহিদ মালেকসহ নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেয়ার পর কোটি কোটি টাকার অনিয়মের চিত্রটি ধরা পড়ে। প্রফেসর ডাক্তার রবিউল হোসাইন হসপিটালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালীন অপরাপর আসামীদের যোগসাজসে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লোকসান দেখান এবং ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক দায় সৃষ্টি করেন। ইম্পেরিয়াল হসপিটালের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং অন্যান্য ডাইরেক্টরগণসহ এই ব্যাপারে আইএইচএল এ র্দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা প্রফেসর রবিউল হোসাইনের কাছে কৈফিয়ত ও হিসেব তলব করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। বিপুল অংকের এই অর্থের গরমিল ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে চিটাগাং আই ইনফার্মারী এন্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাষ্টের (সিইআইটিসি) বোর্ড সভার নামে গোঁজামিলের আশ্রয় নেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাষ্টের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ট্রাষ্টের বোর্ড অব ট্রাষ্টির সভা পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন ট্রাষ্টের ম্যানেজিং ট্রাষ্টি হিসেবে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে সভা আহ্বান করে থাকেন। বিগত ২১ ডিসেম্বর তিনি চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে সিইআইটিসি ট্রাষ্টি বোর্ডের ৯০ তম সভা আহবান করেন। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ভিত্তিতে সভা আহ্বান করে তিনি ১১ ডিসেম্বর নোটিশ প্রদান করেন। উক্ত নোটিশে ছয়টি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছিল এবং সাত নম্বর এজেন্ডায় চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্যান্য বিষয়, যদি থাকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। নির্দিষ্ট দিনে সকাল সাড়ে ১০ টায় সিইআইটিসি ট্রাষ্টি বোর্ডের ৯০তম সভা প্রতিষ্ঠানের সম্মেলন কক্ষে ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। যথারীতি সুনির্দিষ্ট ছয় এজেন্ডার মধ্যে ১ম থেকে ৫ম এজেন্ডা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬ষ্ঠ তম এজেন্ডায় প্রফেসর ড. রবিউল হোসাইনের ইম্পেরিয়েল হসপিটাল লিমিটেডের বোর্ড থেকে পদত্যাগের বিষয় ধার্য্য ছিল। সভায় উক্ত এজেন্ডার উপর শুরু আলোচনাকালে সভার সভাপতি তাকে মৌখিকভাবে বক্তব্য উপস্থাপন না করে লিখিতভাবে পদত্যাগ পত্র দাখিল করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেন মারমুখী আচরণ শুরু করেন। তিনি লিখিত পদত্যাগপত্র দাখিল না করার কারণে উক্ত এজেন্ডাটি পরবর্তী সময়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলে সভাপতি মিটিং মুলতবি ঘোষণা করেন। বৈঠকের সভাপতি এম এ মালেক এবং অপরাপর ৪ জন বোর্ড সদস্য যথাক্রমে ডা. কাজী মো. অহিদুল আলম, প্রফেসর ডা. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং শওকত হোসেন এফসিএ-সহ মিটিং রুম ত্যাগ করে চলে আসেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাত্র ২জন সদস্যকে নিয়ে প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন পার্সোনাল রুমে মিথ্যেভাবে মিটিং চলমান দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপচেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অপকর্ম থেকে নিজেকে দায়মুক্ত রাখার লক্ষ্যে অপরাপর আসামীদের নিয়ে পারষ্পরিক যোগসাজশে দুরভিসন্ধিমূলক নানা প্রতারণামুলক কর্মকান্ডের আশ্রয় নেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। ট্রাষ্টের বিধিবদ্ধ চেয়ারম্যান কর্তৃক সভার কার্যক্রম মূলতবী করার পর তিনি সভার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন না বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার অপরাপর আসামীরা হচ্ছেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম খান এবং কাজী মো. অহিদুল আলম।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ বিপুল অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগে খুলশী থানায় মামলা হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী