বিএনএ, চট্টগ্রাম : সূর্যের দিকে মুখ তুলে রুপের আভা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী।সূর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা। সবুজের মাঠে হলুদের মাঠটি দেখতে মৌসুমে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। যেখানে বাম্পার ফলনের চাষ হয়েছে।এ যেন এক অপার সম্ভাবনা।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের হরিণা ডাঃ এয়াকুব পাড়া এলাকায় মৃত মোঃ ইসলামের পুত্র মোঃ শফিক আহমদের এক কৃষক প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। আর এইসব মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়াতে আসছেন শতশত দর্শনার্থীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, সুর্যমুখী ফুল চাষ করতে কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় সুযোগ রয়েছে।তাতে প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। একজন কৃষককে দেখে অন্যান্যরা কৃষকরাও চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের হরিণা গ্রামের শফিক আহমদের বাড়ীর পাশের ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। শফিকের সফলতা দেখে অন্যান্য চাষীরাও এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবেন বলেও জানা গেছে।
চাষী শফিক আহমদের সাথে আলাপকালে তিনি উক্ত প্রতিবেদককে বলেন, সূর্যমূখী ফুলের চাষে বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মাত্র। কর্তন করতে কিছু টাকা খরচ হবে। পুরো ফসলে সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয় বাগানে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সার্বিক সহযোগীতায় নিয়ে আমি সফলতা পেয়েছি।এবারের পরে আরো ৫০/১০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা আছে আমার। আমি এতে অনেক বেশি খুশী।
আধুনগরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি অফিসের উপ-সহকারী টিটু চক্রবর্তী বলেন,লোহাগাড়ায় প্রথম সুর্যমুখী ফু্লের চাষাবাদ।এর পুর্বে কোন চাষাবাদ হয়নি। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি পুষ্টিগুন সম্পন্ন। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এ ফুলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় কৃষক শফিক অনেক বেশি খুশী। তার চাষাবাদের কারণে অন্যদেরও সূর্যমুখীর চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষীদের রাজস্ব প্রকল্প থেকে ও প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় ফসল করতে বীজসহ সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে। এটা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ধরণের সাফল্য অর্জন এবং মুজিব শত বর্ষে সফলতা বয়ে এনেছে। এই সূর্যমুখী ফুলের বাগানে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভীড় করছেন, তারা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড দিয়ে সুন্দরভাবে প্রচার করছেন। প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর্য দেখে ফুলে ফুলে সজ্জিত এই আধুনগরের হরিণার মাঠ। তিনি আরও জানান,সুর্যমুখী ফুলের চাষাবাদে সার্বক্ষণিক থেকে সহযোগীতা করে চাষীদের পরার্মশ দেয়া হয়েছে। সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে সুর্যমুখী ফুল চাষ করা হচ্ছে। সুর্যমুখী ফুল থেকে সুর্যমুখী তেল উৎপাদন হবে। প্রতি বীজের কেজি ২২ টাকা টাকা। সুর্যমুখী তেলের প্রতি কেজি ২৫০ টাকা বিক্রি করা হয়। দেশের চাষকৃত সূর্যমূখীর মাধ্যমে তেলে ঘাটতি পূরন করা সম্ভব। এই তেল অনেক পুষ্টিকর এবং অন্য তেলের চেয়ে অনেক ভালো।
সুর্যমুখীর তেল ছাড়াও খৌল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অন্য সফলের তুলনায় সূর্যমুখীর উৎপাদন অনেক সহজ। পোকা-মাকড়ের কোন আক্রমন নেই। তাছাড়া বাজারেও সূর্যমুখীর চাহিদা রয়েছে, দাম অনেক ভালো।
এদিকে, প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসছে, এ যেন এক অপার সম্ভাবনার হরিণা মাঠ। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন,ফেইসবুকে ছবি তুলে ভাইরাল করছেন। সৌন্দর্যে ভরপুর সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখে দর্শনার্থীরা অনেক বেশী অানন্দিত ও উৎপল্ল।
বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে প্রান্তিক কৃষকদের আরো সার্বিক সহযোগীতা ও সূর্যমূখী চাষে আগ্রহী করে তুললে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক আকারে চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএনএনিউজ/রায়হান,জেবি