বিএনএ,চট্টগ্রাম: শুল্ক প্রত্যাহারের পরও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চিনির দামে প্রভাব পড়ছে না। উলটো চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি মন (৩৭.৩২ কেজি) চিনিতে দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। এছাড়া বেড়েছে ভোজ্যতেল, মুরগি ও চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও আমদানিকারক সূত্রে জানা যায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দেশে মোট অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শীর্ষ আমদানিকারক মেঘনা গ্রুপ ছয় লাখ ২৪ হাজার ৪৮৭ মেট্রিক টন, সিটি গ্রুপ পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন, এস আলম গ্রুপ তিন লাখ ৩৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন এবং আবদুল মোমেন গ্রুপ এক লাখ ৪৪ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন এবং দেশবন্ধু গ্রুপ এক লাখ আট হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন করেছিল। এসব চিনির বাজারের নিয়ন্ত্রণ করছে এই পাঁচ গ্রুপের সিন্ডিকেট।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, চিনির বাজার আমাদের দেশে যখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা (ভারতে) পার্শ্ববর্তী দেশে চিনির খুচরা মূল্য ৪০ টাকা এবং পাইকারি মূল্য ৩৫ টাকা। সরকার যদি সাধারণ ব্যবসায়ীদের ফিনিশড গুডস আমদানি করার পারমিশন দেয়, কালকেই চিনির বাজার বাংলাদেশে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে চলে আসবে। এভাবে সব পণ্যেরই ফিনিশড গুডস আমদানি করার পারমিশন দিতে হবে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশজ উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরাসরি কৃষকদের উচ্চ মানের বীজ সরবরাহ এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে করপোরেট সন্ত্রাসীরা এভাবেই সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে ডাকাতি করতে থাকবে।
চিনি আমদানিকারক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় চিনি পরিশোধনের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেখা গেছে বাজারে পাইকারিতে প্রতি মন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। ৩ দিন আগেও এই চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। অপরদিকে চট্টগ্রাম নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। কাঁচামাল আমদানি ও এলসি খোলা সম্ভব না হলে চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিনি মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে-এসব কারণেও বাড়ছে চিনির দাম।
তবে কিছু ব্যবসায়ী বলছেন দেশের হাতেগোনা কয়েকটি শিল্প গ্রুপ নিত্যপণ্যের বাজারে ডাকাতি করছে। কিন্তু সরকার যদি দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিত্যপণ্যের ফিনিশড গুডসের আমদানির পারমিশন দেয়, বিশেষ করে চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করার পারমিশন দিলে করপোরেট সন্ত্রাসীরা আর ডাকাতি করতে পারবে না। ভোগ্যপণ্যেও দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিসত্বর প্রত্যেকটা ভোগ্যপণ্যের ফিনিশড গুডস আমদানি করার পারমিশন সাধারণ ব্যবসায়ীদের দিতে হবে এবং দেশীয় কৃষিশিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
চিনির বাজার নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, চিনিশিল্পের ক্ষেত্রে আমাদের নিজের দেশের দেশীয় চিনিশিল্পকে নষ্ট করে ধ্বংস করে গুটিকয়েক সিন্ডিকেট করপোরেট গ্রুপ। চিনিশিল্পকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সব সময় চিনিশিল্পে একটি অস্থিরতার মধ্যে রাখে। এখনই সময় দেশীয় চিনিশিল্পের উন্নয়ন। দেশীয় চিনিশিল্পের উন্নয়ন মানে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন। এক্ষেত্রে প্রান্তিক কৃষকেরা লাভবান হবে, সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের ভোক্তাসাধারণ কম মূল্যে ভালো মানের চিনি খেতে পারবে।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী