29 C
আবহাওয়া
৪:২৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৭ (কিশোরগঞ্জ-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৭ (কিশোরগঞ্জ-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬৭ (কিশোরগঞ্জ-৬)

বিএনএ ডেস্ক :  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের হালচাল।

YouTube player

কিশোরগঞ্জ-৬ আসন 

কিশোরগঞ্জ-৬ সংসদীয় আসনটি কুলিয়ারচর এবং ভৈরব উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৬৭ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আমির উদ্দিন বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ২ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪ হাজার ৭ শত ৩০ জন। নির্বাচনে বিএনপির আমির উদ্দিন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৫ শত ৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল লতিফ নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৮ শত ৫৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আমির উদ্দিন কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির আমির উদ্দিন কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মজিবুর রহমান মন্জু বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৪ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮ শত ৫১ জন। নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান মন্জু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ১ শত ৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আলাউল হক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ২শত ৬১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মজিবুর রহমান মন্জু বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪ হাজার ১ শত ৮৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮ শত ২০ জন। নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান মন্জু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৬ শত ৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জিল্লুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৮ শত ১৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জিল্লুর রহমান বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯ শত ২৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জিল্লুর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫ শত ৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শরিফুল আলম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৮ শত ৩৭ ভোট।

পরবর্তীতে জিল্লুর রহমানকে দেশের উনিশতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। শূন্য এ আসনে তারই ছেলে নাজমুল হাসান পাপন উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬ শত ৫১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৭ শত ৩৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শরিফুল আলম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে মুছা খান, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ রুবেল হোসেন, লাঙল প্রতিকে জাতীয় পার্টির নুরুল কাদের সোহেল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নাজমুল হাসান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯ শত ৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শরিফুল আলম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৮ হাজার ৮৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম,ষষ্ঠ, সপ্তম,অষ্টম, সংসদে বিএনপি, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ-৬ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.১০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৭৮%, বিএনপি ৪৪.৪৮%, জাতীয় পাটি ২.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৯.৮৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৭২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৭৪%, বিএনপি ৩৮,০৯% জাতীয় পাটি ১৯.৬১%, জামায়াত ইসলামী ৪.২৬ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৩০ % ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.২৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.৮৫%, ৪ দলীয় জোট ৫১.৭২%,, জাতীয় পাটি ০.৭৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৮৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬১.৪৯%,, ৪ দলীয় জোট ৩৮.০৮% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৩% ভোট পায়।

কিশোরগঞ্জ ৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। তিনিও দলের একক প্রার্থী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোসেন ও নূরুল কাদের সোহেল। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট দলের ভৈরব উপজেলার সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ রুবেল হোসেন মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর এ আসনটিতে জাতীয় পার্টি একবার এবং বিএনপি থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। বাকি সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ জিল্লুর রহমান এই আসন থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার ছেলে নাজমুল হাসান পাপন তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও তার ছেলে বিসিবি সংসদ সদস্য সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। পিতা-পুত্রের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১০০ শয্যা হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টার, বিসিক শিল্পনগরী, আইভি রহমান স্টেডিয়াম পৌর শিশুপার্ক, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স।

কিশোরগঞ্জ -৬ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দল নেই। সেই দিক থেকে দুই দলই নির্ভার।
অতীতের নির্বাচনগুলোর ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট সব সময় কাছাকাছি ছিল। জয়-পরাজয়ে ভোটের ব্যবধানও ছিল কম। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৬৭তম সংসদীয় আসন (কিশোরগঞ্জ-৬) আসনটিতে দুই দলের প্রার্থীর লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ