জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ, মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। একবাক্যে সবাইকে সেটা স্বীকার করতেই হবে।এই দেশে অনেক দল থাকবে, মত থাকবে কিন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হবেন সবার শ্রদ্ধার পাত্র। এ সম্মানটুকু তার প্রাপ্য, অধিকার। তাই দল যার যার বঙ্গবন্ধু সবার।
ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক দেশভাগের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হবার পর, ধর্মব্যবসা প্রতিরোধ করে নিপীড়িত বাঙালি জাতির ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। এরপর খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে ঘুরে এই দলকে গণমানুষের দলে পরিণত করেন তেজস্বী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। যার ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে একই স্পন্দনে অনুভব করতে শুরু করে বাংলার মানুষ। ফলে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের দীর্ঘ পথযাত্রার প্রতিটি আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সমর্থ হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দল। যার সুফল মিলে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সকল অনুভুতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় প্রত্যয়, বাঙালি জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শের দ্বারা সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে দীক্ষিত করে তুলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জন্মলাভ, ’৪৮-এর মার্চে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন, ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম, ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ১১-দফা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ’-এর নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস সৃষ্টিকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিশপথে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, ৩০লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
একটি জাতির বহু ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণিপেশার মানুষকে একতাবদ্ধ করে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনা করা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা- দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন। এমনকি স্বাধীনতা অর্জনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠিয়ে নিজস্ব জনবল দিয়ে দেশ পুনর্গঠন এবং বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরো একটি বড় অর্জন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক ইমেজ এবং দূরদর্শিতার কারণেই সদ্য-স্বাধীন এই দেশটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদের ভাষণে এটি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। পঁচিশ বছর আমরা দেখেছি- ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
রাষ্ট্রে ধর্মের অপব্যবহার রোধের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সংবিধানে মূলনীতি নির্ধারণ করেন, তেমনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সঠিক ধর্মচর্চার জন্যেও সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের পরম আত্মীয়, শত বছরের ঘোর নিশীথিনীর তিমির বিদারী অরুণ, ইতিহাসের বিস্ময়কর নেতৃত্বের কালজয়ী স্রষ্টা, বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। এই বিষয়টি একবাক্যে সকলেই স্বীকার করবেন।
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব, তার চেতনা অবিনশ্বর। বাঙালি জাতির অস্থিমজ্জায় মিশে রয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিবাদর্শে শাণিত বাংলার আকাশ-বাতাস জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে বাংলাদেশে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই প্রাণের বাংলাদেশে অনেক দল থাকবে, মত থাকবে কিন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন সবার শ্রদ্ধার পাত্র। এ সম্মানটুকু তার প্রাপ্য, অধিকার। তাই দল যার যার বঙ্গবন্ধু হোক সবার। আজ ১৫ আগস্ট শোকাবহ দিনে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
-সৈয়দ গোলাম নবী,সাংবাদিক।