29 C
আবহাওয়া
১০:৩৫ অপরাহ্ণ - আগস্ট ৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » বাঙালি হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু অমলিন

বাঙালি হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু অমলিন

বঙ্গবন্ধু

বাংলার আকাশ-বাতাসে অনুরিত হচ্ছে শোকের মাতম, বাঙালির হৃদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ। বঙ্গবন্ধুকে হারানো বেদনাবিধূর শোকের আগস্ট মাস। পঁচাত্তরের এই দিনে বাংলার জমিন লাল হয়েছিল মহান নেতার রক্তে। ১৫ আগস্ট শেষ রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে ঘাতকরা। বাংলার আকাশ বাতাস সেদিন ভারি হয়েছিল শোকের মাতমে।  ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে স্বাধীন বাংলার মানুষ সেদিন বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোক আর আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে সে শোকের শিখা।

সেদিনের পর থেকেই বাঙালি ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর শোকের মাস হিসেবে পরিচিত আগস্ট।  যে মহান নেতার আজীবন সংগ্রাম আর ত্যাগের মধ্যে এসেছিল বাঙলার মহান স্বাধীনতা, মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় তারই প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল একদল হায়েনা।

আগস্ট এলেই বাঙালি হৃদয় বেজে উঠে শোকের সুর । বাঙালি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে হাজার বছরের শ্রেষ্ট মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে । শতচেষ্টার পরও ঘাতকরা এই মহান নায়ককে বাঙালির কাছ থেকে আলাদা করতে পারেনি, রয়ে গেছে বাঙালির মনের মণিকোঠায়।

বঙ্গবন্ধু যার নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের জন্ম হয় ছাত্রলীগের। যার অবদান ছিল ১৯৪৮-এর মার্চে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদ আন্দোলনে, ১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ৬-দফা  সহ ১১-দফা, এবং ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে।

১৯৭০-এর নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ’-এর নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস সৃষ্টিকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জন এবং বঙ্গন্ধুর আকাশচুম্বি জনপ্রীয়তা প্রকাশ পায়, যা থেকেই বাঙালির স্বাধীন বাঙলার স্বাপ্ন চুড়ান্ত শিখরে পৌছায়।

বাঙালি জাতীর স্বাধীনতার সংগ্রামের আগুন জ্বলে উঠে এই মহানায়কের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সেই ভাষণের মধ্যে দিয়ে, যে ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিশপথে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি।

বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন বাঙালির মুক্তির প্রতীক, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন একটি সোনার বাঙলা গড়ার। কিন্তু একদল হায়েনা তার স্বপ্নের বাঙলাকে সাজাতে দেয়নি, মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় নিষ্ঠুর হত্যাযঙ্গে প্রাণ কেড়ে নেয় বাঙলার এই মহানায়কে। তারা শুধু তাকে নয় স-পরিবারে চালায় এ হত্যাযঞ্জ, যে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছির শিশু পুত্র শেখ রাসেল ও।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন, শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ আবু নাসের, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল, সুলতানা কামাল খুকী, শেখ জামাল, পারভীন জামাল রোজী, শেখ রাসেল, শেখ মনির বাড়ি (গুলিতে গুরুতর আহত এবং হাসপাতালে মৃত ঘোষিত), শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম আরজু মনি (বেগম সামসুন্নেসা)

সেরনিয়াবাতের বাড়ি (গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত): আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, নাঈম খান রিন্টু, পোটকা (গৃহভৃত্য), লক্ষীর মা (গৃহভৃত্য)

অন্যান্য: সিদ্দিকুর রহমান (পুলিশ কর্মকর্তা), সামছুল হক (পুলিশ কর্মকর্তা), কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ (মুজিবের নিরাপত্তা কর্মকর্তা)

শেরশাহ সুরী রোডের ৮ ও ৯ নং বাড়ি এবং শাহজাহান রোডের ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ি (মর্টারের গোলার আঘাতে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে নিহত): রেজিয়া বেগম, নাসিমা, হাবিবুর রহমান, আনোয়ারা বেগম, আনোয়ারা বেগম (২), ময়ফুল বিবি, সাবেরা বেগম, আবদুল্লাহ, রফিকুল, সাফিয়া খাতুন, শাহাবুদ্দিন, কাশেদা, আমিনউদ্দিন, হনুফা বিবি।

আহত হয় আরো ৫ জন: বেগম আবদুর রব সেরনিয়াবাত, বেগম আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বিউটি সেরনিয়াবাত, আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, হেনা সেরনিয়াবাত। তথ্য, উইকিপিডিয়া।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে ঘাতকরা চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে, বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে।  কিন্তু সব চক্রান্ত, সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি শামসুর রাহমান তার ”ধন্য সেই পুরুষ” কবিতায় লিখেছেন-

”ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল,

গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা,

যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া,

ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা…”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে মহান নেতার নেতৃত্বে মুগ্ধ হয়েছেল গোটা বিশ্ব,যাকে উৎসর্গ করে লেখা হাজারো সাহিত্য। যার ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় বাঙালি জাতী দেখেছে  মুক্তির পথ। মহান এ নেতা রবে বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায় শ্রদ্ধাভরে। রবে বাঙালির হৃদয়ে অমলিন হয়ে।

আরও পড়ুন :

বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ