বিএনএ, ঢাকা: টানা কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। ঘরের বাইরে সবখানে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। গরমে সেদ্ধ জীবনে বৃষ্টির জন্য মানুষ আকাশপানে তাকিয়ে থাকলেও দেখা নেই স্বস্তির বৃষ্টির। এরমধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বেড়েছে। থার্মোমিটারের পারদ বলছে আজ (সোমবার) তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং এই কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আজকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে খেপুপাড়ায় (পটুয়াখালীর কলাপাড়া) ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খেপুপাড়ায় একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল(রোববার) খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, আজ রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়েছে। ঢাকায় আজ সর্বোচ্চ ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা গতকাল ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে রংপুর ও নীলফামারী জেলাসহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থায় রাজধানীর সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। শহরে পর্যাপ্ত গাছ আর ছায়াযুক্ত জায়গা না থাকায় কোথাও প্রশান্তির ঠাঁই মিলছে না। একটু বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন রাজধানীবাসী।
মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী ইসরাত ওসমান বলেন, এতটাই গরম পড়েছে যেন মরে যাব। রাস্তার পাশে নেই কোন গাছ, তেমন বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোন জায়গা নেই। একটু বৃষ্টি হলে ভালো লাগতো।
রিকশা চালক হায়দার আলী বলেন, শুধুমাত্র পেটের দায়ে এই গরমের মধ্যে জীবন বাজি রেখে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। ইচ্ছে হয় ঠান্ডা কোথাও শুয়ে থাকি, কিন্তু পারি না। গরমে অতিষ্ঠ লাগে, একটু পর পর পানি খাই আর বসে থাকি। গরমের মাত্রা বেশি হওয়ায় কাজও করতে পারি না। ভাতের টাকা হলেই আর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হবো না। এই ভ্যাপসা গরমে কখন যে দম বন্ধ হয়ে পড়ে যাই চিন্তা করছি।
অন্যদিকে তীব্র গরমের কারণে সাধারণ মানুষ যখন বাইরে বের হতে ভয় পায় তখন কড়া রোদে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় পুলিশ সদস্যদের। অনেক সময় প্রচণ্ড পিপাসা পেলেও রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকলে ট্রাফিক বক্সে গিয়ে পানি পান করার সুযোগ পান না তারা।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর শেরে বাংলা নগর, বিজয় সরণী, তেজগাঁও, কাকরাইল ও গুলিস্তান এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে দাঁড়িয়ে এক হাতে মাথার ওপর ছাতা ধরে আরেক হাতে ট্রাফিক সিগনাল পরিচালনা করছেন ট্রাফিক সদস্যরা। যানবাহনের শব্দ, প্রচন্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়লেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সড়কেই থাকতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগনাল মোড়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুইজন সার্জেন্ট, চারজন এএসআই ও কনস্টেবল নিয়মিত এখানে ডিউটি করেন। তাপপ্রবাহের কারণে ঘণ্টাখানেক পরপর একজন রেস্টে যাচ্ছেন, আরেকজন দাঁড়াচ্ছেন সিগনালে। তবে ট্রাফিক বেড়ে গেলে চাপও বেড়ে যায়, তখন আর বসে থাকার উপায় থাকছে না।
শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, বন্দর নগরীর চট্টগ্রামেও তপ্ত রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট লাবিবুর রহমান বলেন, রোদ, বৃষ্টি কিংবা গরম সব পরিস্থিতিতেই আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদিন নগরীতে অসংখ্য মানুষ যানবাহনে চলাচল করে। এই চলাচল নির্বিঘ্নে রাখতে আমাদের অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। তবে একটা কথা বলতে হয়, এবারের মতো তাপদাহ আগে কোনো দেখিনি। গরমের কারণে এবার রাস্তায় কাজ করতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বার বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তার পরেও অর্পিত দায়িত্ব অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনএ/এমএফ/এইচমুন্নী