বিএনএ, কুমিল্লা: কুমিল্লায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ রেখে দেয়ার ৫ মাস পর ফের অপারেশন করে গজ বের করা সেই শারমিন আক্তার (২৫)মারা গেছেন।গতকাল বুধবার(১৪ এপ্রিল) ভোরের দিকে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শারমিনের স্বামী রাসেল মিয়া।শারমিনের মরদেহ ঢাকা থেকে তার বাবার বাড়ি কুমিল্ল জেলার দেবিদ্বারের হোসেনপুর গ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে সকাল ১০টায় প্রথম জানাজা শেষে নেয়া হবে তার স্বামীর বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে এ ভুল চিকিৎসার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তবে এখনও কাজ শুরু করেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্ত কমিটি।গত এক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।শারমিন আক্তারের পরিবারের অভিযোগ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তার সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছিল ৫ মাস আগে। কিন্তু অপারেশনের সময় কর্তব্যরত ডাক্তার ও তার সহযোগীরা ভুলবশত পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেন।তীব্র ব্যথায় ওই প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে গত ৬ এপ্রিল রাতে কুমিল্লা জেলার ময়নামতির অপর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে পুনরায় অপারেশন করে পেট থেকে বের করা হয় গজ।কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় গত শনিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে তাকে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল এবং পরে লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়।
শারমিনের স্বামী রাসেল মিয়া জানান,গত বছরের ৫ নভেম্বর দেবিদ্বার আল ইসলাম হসপিটালে তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই হাসপাতালের খণ্ডকালীন চিকিৎসক ডা.রোজিনা আক্তার। জন্ম হয় এক ছেলে সন্তান। গত ৯ নভেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়।ডাক্তারের এ ভুলে আমার সাড়ে ৩ বছরের কন্যা মানহা এবং সাড়ে ৫ মাস বয়সী মুনতাছির মা হারা হলো। তাদের মায়ের শূন্যতা পূরণ করব কীভাবে? চিকিৎসকদের ভুলের এ খেসারত স্ত্রীর মৃত্যুর মধ্য দিয়েই দিতে হবে তা ভাবতে পারিনি।
শারমিনের বড় ভাই রুহুল আমিন জানান,ওই প্রাইভেট হাসপাতালে তার বোনকে ভর্তির পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রোজিনা আক্তার তাকে দেখে জরুরি সিজার করতে পরামর্শ দেন। ডাক্তারের কথা শুনে আমরা সিজারে রাজি হলে ৫ নভেম্বর ডা.রোজিনা আক্তার ও তার সহযোগী ডা. শামীমা আক্তার লিন্টাসহ অন্যান্য নার্স ও ওটি বয় মিলে তার বোনের সিজার সম্পন্ন করেন। সিজারের দুই দিন পর থেকে শারমিনের পেটে ব্যথা হতে থাকে, হাসপাতাল থেকে এ সময় কিছু ওষুধ দেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর অপারেশনের ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকে।পরে ব্যথা আরও বেড়ে গেলে তাকে কুমিল্লাসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রচুর ওষুধ খেতে দেন। কিন্তু তার জীবন সংকটাপন্ন দেখে গত ৬ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার ময়নামতি ক্যান্টমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে তার অপারেশন করে পেট থেকে গজ বের করা হয়।তিনি আরও জানান,দেবিদ্বারে আমার বোনের সিজারিয়ান অপারেশনে নিয়োজিত চিকিৎসকের এমন ভুলের কারণে আমার বোন অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে ছিল। দীর্ঘ এ সময়ে দেশের অনেক নামী-দামী হসপিটালে ঘুরেছি, অর্থ ব্যয় করেছি।কিন্ত কার কাছে বিচার চাইব?
এ ব্যাপারে আল ইসলাম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, ঘটনাটি যেভাবেই কিংবা যার ভুলেই হোক এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে আমরা অনুতপ্ত এবং ওই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছে।
মুঠোফোনে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা.মীর মোবারক হোসাইন বলেন,ওই প্রসূতির মৃত্যুর খবর আমরা জানতে পেরেছি।এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনএ/আজিজুল , ওজি