বিএনএ, ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অফিস আদেশ সূত্রে, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলকে আহ্বায়ক ও উপ-রেজিস্ট্রার আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ড. দেবাশীষ শর্মা, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও সহকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. মুর্শিদ আলম। এ কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এরআগে আজ (বুধবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী। গত রোববার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে তাকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেছে পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ কমিটি গঠন করেন।
জানা গেছে, নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং পরিসংসখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ সূত্রে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র্যাগিং করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটা সম্ভব হয়নি।
পরদিন রোববার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই ছাত্রীকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন তাকে। এরপর জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় ভুক্তভোগীকে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী আরও বলেন, আমাকে গত রোববার গণরুমে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমার শরীরে এখনো ব্যাথা করছে। জীবন বাঁচাতে পরদিন সোমবার ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে আসি। আমি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
নির্যাতনকারি হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী বলেন, সে আমার নাম করে আমাকেই ভয় দেখাচ্ছিলো। এজন্য তাকে ‘বোঝানো’ হয়েছে। তবে তার সঙ্গে আমরা এমন ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাইনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, কেন্দ্র থেকে এ ঘটনায় তদন্তের নিদর্শনা দিয়েছেন আমরা সব কিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য কেন্দ্রে জানাবো। আর সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা সংগঠন নিবে। ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠন বহন করবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সাথে জরুরী মিটিং করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তরা দোষী সাবস্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শাস্তি পাবে।
বিএনএ/তারিক, এমএফ